মোঃ মানিক হোসেন :
রাজশাহীর বাগমারায় বাবার মুক্তিযোদ্ধার ভাতার টাকা না পাওয়ায় মাকে নির্যাতন ও গৃহবন্দী করে রাখার অভিযোগ উঠেছে সন্তানের বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগে মা জাহানারা বেওয়া(৬০) একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
রবিবার(৩০এপ্রিল) বাগমারা উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের সূর্যপাড়া গ্রামে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি স্থানীয় মিডিয়া কর্মীদের সামনে তুলে ধরেন ভুক্তভোগী মা।
সংবাদ সম্মেলনের আগে জাহানারা বেওয়া বাগমারা থানায় গিয়ে তার বড় ছেলে জাহিদর রহমানের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ ও সংবাদ সম্মেলন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারী জাহানারার স্বামী মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলী মৃত্যু বরণ করেন। সেকেন্দার আলী ছিলেন বেসকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। স্বামী বেঁচে থাকাকালীন জাহানারা দম্পত্তি তাদের ছোট ছেলে জাকারিয়ার আশ্রয়ে থাকতেন। জাকারিয়া তাদের ভরণপোষন করতেন। মুক্তিযোদ্ধা স্বামীর মৃত্যুর পর তার সম্মানী ভাতা জাহানারার নামে স্থানান্তরিত করা হয়। এদিকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকা সরকারি ভাবে বাড়তে বাড়তে বিশ হাজার টাকা হলে ওই টাকার প্রতি নজর পড়ে বড় ছেলে জাহিদুর রহমানের।
জাহিদুর রহমান ঢাকার মহাখালিতে এন,এস,আই অফিসের একজন অফিস সহকারি । ২০১৮ সাল থেকে জাহিদুর এই টাকার জন্য তার মাকে নানান ভাবে মানসিক চাপ ও নির্যাতন শুরু করে। প্রতিবেশিরা জানান, জাহিদুল বিভিন্ন সময় ছুটিতে বাড়িতে এসে ওই টাকার ভাগ নেওয়ার জন্য তার মাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ মারপিট শুরু করে। তাকে এই কাজে সহযোগিতা করে তার স্ত্রী সানজিদা আক্তার মিন। সে বিভিন্ন ভাবে স্বামীকে প্ররোচনা ও ইন্ধন দিয়ে শ্বাশুড়ীর ওপর অমানবিক নির্যাতন ও মারপিট করে বাড়ি ছাড়া করার হুমকি দেয়।
তারা স্বামী স্ত্রী মিলে জাহানারা ও তার ছোট ছেলের বাড়ির যাতাযাতের রাস্তা বন্ধ করে দেয় এবং সেখানে হাঁস-মুরগী ও গরু-ছাগলের মলমূত্র ফেলে যাতায়াতের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এভাবে অত্যাচার নির্যাতনের এক পর্যায়ে চলতি মাসের ২০ এপ্রিল জাহিদুলের স্ত্রী সানজিদা তার শ্বাশুড়ীর বাড়ির মেইন গেইটে তালাবদ্ধ করে রাখে এবং পানির লাইন বন্ধ করে রাখে। এ সময় রমজান মাস । চরম বেকায়দায় পড়ে যান বিধবা জাহানারা বেওয়া ও তার ছোট ছেলে জাকরিয়া।
পরে তারা ৯৯৯ নাইনে কল করলে পুলিশ এসে অবরুদ্ধ জাহানারা বেওয়া ও তার ছোট ছেলে জাকারিয়াকে উদ্ধার করে। এ সময় পুুলিশ উভয় পক্ষের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা করে শন্তিস্থাপন করে দিলেও তাদের সেই শান্তির ধারা অল্পদিনেই ভেস্তে যায় জাহিদুলের স্ত্রী সানজিদা আক্তারের কারণে। তিনি দু’এক দিন পরেই শ্বশুড়ীর প্রতি আবারও অত্যাচার নির্যাতন শুরু করেন। কথায় কথায় তার বাড়ির পানির লাইন বন্ধ দনে এবং মলমূত্র ফেলে আবার তাদের চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন।
জাকারিয়া অভিযোগ করে বলেন, তারা চার ভাই এক বোন। সবাই বিবাহ করে যে যার মত পৃথক। পিতা জীবিত থাকাকালীন তিনি পিতামাতার দেখাশুনা করে তার আশ্রয়ে রেখে ছিলেন। পরে পিতার মৃত্যু হলে তার বিষয়সম্পত্তির অধিকাংশই তার বড়ভাই সহ অন্যান্য ভাইয়েরা ভোগদখল শুরু করেন। এখনও সম্পত্তির বেশির ভাগই তাদের ভোগদখলে রয়েছে। তিনি মায়ের ইচ্ছাতেই তার মায়ের ভরণপোষন চিকিৎসার যাবতীয় দেখাশুনা করে আসছেন। জাকারিয়া আরো জানান, তার ভাই এনএসআই-তে চাকুরী করায় প্রায় তাকে মাদক সহ মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয় এবং বলে আমি প্রশাসনের লোক। পুলিশ আমার কিছুই করবে না। উল্টো তুকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেলের ভাত খাওয়াব।
জাহানারা বেওয়া জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর তার মুক্তিযোদ্ধার ভাতার টাকা তার খাওয়াপড়া ও চিকিৎসা কাজে ব্যয় করে যে টাকা বাঁচে তা তিনি সব ছেলে ও মেয়ের পক্ষের নাতিপুতিদের মাঝে সমান করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার বড় ছেলে এই টাকার ষোলআনা ভাগ দাবী করে তার ছোট ছেলের উপর অন্যায় ভাবে নির্যাতন ও জুলুম শুরু করায় তিনি বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহিদুল রহমান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন ও একপেষে দাবী করে বলেন, এর আগে গ্রাম্য সালিশে বিষয়টি নিয়ে মিমাংসা হয়েছে। সেখানে আমাকে ভাতার টাকা দেওয়ার বিষয়ে বলা আছে। এদিকে মায়ের দেখাশুনা ভরনপোষন না করে তার ভাতার টাকার ভাগ চান কেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন সদুত্তর করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগমারা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য এসআই রফিককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এসআই রফিক জানান, এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছি। ইতিমধ্যে জাহিদুর রহমানের সাথে কথা বলেছি। তিনি মানুষ তো সুবিধার না। তদন্ত আরো করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :