আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে তিনটি মামলায় বাংলাদেশের ২৫ জন সেনাকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ওই ২৫ জনের মধ্যে ১৫ জন এখনও সেনাবাহিনীতে কর্মরত। এক জন অবসরের আগে ছুটিতে রয়েছেন (এলপিআর)।
শেখ হাসিনার আমলে ‘গুম করে নির্যাতন’, গণআন্দোলনের সময়ে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’-এ জড়িত থাকার অভিযোগে ১৫ জন সেনাকর্তাকে হেফাজতে নিয়েছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী। তাঁরা সকলেই এখনও সে দেশের সেনাবাহিনীকে কর্মরত ছিলেন। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল পরোয়ানা জারি করার পরেও কেন তাঁদের গ্রেফতার করা হয়নি, দেশবাসীর একাংশ সেই প্রশ্ন তুলেছেন। এই ঘটনায় সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের বিরোধী বিএনপি এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি। তারা জানাল, এই ‘অপরাধে’র দায় ব্যক্তির। কোনও প্রতিষ্ঠানের নয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে তিনটি মামলায় বাংলাদেশের ২৫ জন সেনাকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ওই ২৫ জনের মধ্যে ১৫ জন এখনও সেনাবাহিনীতে কর্মরত। এক জন অবসরের আগে ছুটিতে রয়েছেন (এলপিআর)। এই ১৬ জনের মধ্যে হাসিনার আমলের সামরিকসচিব মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ ছাড়া বাকি সকলকেই হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে শনিবার জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনা। সেনার অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান সাংবাদিক বৈঠক করে এই তথ্য দেন। তিনি জানান, কবীর বর্তমানে ‘আত্মগোপন’ করে রয়েছেন। বাকি ১৫ জনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। কেন তাঁদের গ্রেফতার করা হয়নি, সেই প্রশ্ন উঠেছে। তার মধ্যে শনিবার সেনাবাহিনী সাংবাদিক বৈঠক করে তাঁদের হেফাজতে নেওয়ার কথা জানিয়েছে। তারা জানায়, পরোয়ানা তাদের কাছে এসে পৌঁছোয়নি। সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি তাদের নজরে আসার পরে ৮ অক্টোবরই ১৬ জন সেনাকর্তাকে হেফাজতে আসতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ৯ অক্টোবরের মধ্যে সেই নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয় সেনার তরফে। ছুটিতে থাকা আধিকারিক-সহ ১৫ জন সেনাকর্তাই নির্দেশ মেনে হেফাজতে যান বলে জানিয়েছেন হাকিমুজ্জামান।
এই গোটা ঘটনায় সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়িয়েছে বিরোধী বিএনপি এবং জামায়াতে। বিএনপির বরিষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, কিছু ব্যক্তির ‘অপকর্ম’-এর দায় প্রতিষ্ঠানের উপরে চাপানো ঠিক নয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব রক্ষায় সংশ্লিষ্ট অপরাধের সুষ্ঠু ও নির্মোহ বিচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ন্যায়বিচার শুধু অতীতের ঘটনাগুলির শাস্তির নিশ্চয়তা দেয় না বরং ভবিষ্যতে যেন কেউ এমন অন্যায়ের পুনরাবৃত্তি না ঘটায়, সেই নিশ্চয়তাও দেয়।’ একই সুর শোনা গিয়েছে জামায়াতের গলাতেও। ১৫ জনকে হেফাজতে নেওয়ার ঘটনাকে স্বাগত জানিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। তিনি পূর্বতন হাসিনা সরকারের দিকেও আঙুল তুলেছেন। শফিকুর লেখেন, ‘‘দুঃখজনক হলেও সত্য, এই বাহিনীর কতিপয় সদস্য দেশের বিদ্যমান আইন ও মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন।’’ পূর্বতন সরকারকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বলেও দেগে দিয়েছেন। তার পরেই লেখেন, ‘‘সুনির্দিষ্ট কয়েক জন ব্যক্তির অপরাধের কারণে পুরো প্রতিষ্ঠানকে কলঙ্কিত হতে দেওয়া যায় না।’’ ১৫ জনকে হেফাজতে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।
সেনার তরফে জানানো হয়েছে, হাসিনার আমলের সামরিক সচিব কবীর সেনা হেফাজতে যাননি। তাঁর পরিবারের তরফে জানানো হয়, ৯ অক্টোবর আইনজীবীর পরামর্শ নিতে যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বার হয়েছিলেন। তার পরে তিনি আর ফেরেননি। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারেননি পরিবারের সদস্যেরা। হাকিমুজ্জামান জানান, কবীরকে ‘ফেরার’ ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁর খোঁজ চলছে। তিনি যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন, সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তার পরেই হাকিমুজ্জামান জানান, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ন্যায়বিচারের পক্ষে। যাঁরা ‘গুম’ হয়েছিলেন, তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা রয়েছে সেনার। তিনি এ-ও জানান, অভিযোগপত্রে অপরাধ যখন হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়, তখন অভিযুক্তদের কেউই সেনাবাহিনীর সরাসরি কমান্ডের অধীনে ছিলেন না। র্যাব বা অন্য বাহিনীর অধীনে ছিলেন। অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্তাদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হবে, সেই নিয়েও বিবেচনা করছে বাহিনী বলে জানানো হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :