সর্বশেষ :

দেশের বারোটা বাজিয়ে এখন ‘সেফ এক্সিট’


অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশের সময় : অক্টোবর ৮, ২০২৫ । ১:৫৭ পূর্বাহ্ণ
দেশের বারোটা বাজিয়ে এখন ‘সেফ এক্সিট’

সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেছেন, গত দুই–তিন দিন ধরে একটি বিষয় সবার মুখে মুখে ঘুরছে—সেই বিষয়টি হলো ‘সেফ এক্সিট’। বলা হচ্ছে, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা, অর্থাৎ ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের উপদেষ্টারা বর্তমানে সেফ এক্সিটের পথ খুঁজছেন। এ জন্য তারা বিভিন্ন মহলের সঙ্গে, বিশেষ করে যেসব রাজনৈতিক দল আগামীতে ক্ষমতায় আসতে পারে—তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তারা এসব দলের কাছ থেকে এমন আশ্বাস চাইছেন যেন ভবিষ্যতে সরকার পরিবর্তনের পর তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা না নেওয়া হয় এবং তারা নিরাপদে দেশ ছাড়তে পারেন।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে তিনি এসব কথা বলেন।

মাসুদ কামাল বলেন, এই ‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে আলোচনা কিন্তু নতুন কিছু নয়। এর আগেও আমরা এমনটা দেখেছি। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ড. ফখরুদ্দীন আহমদ দায়িত্ব শেষে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগ সরকার তখন তাদের ‘সেফ এক্সিট’ দিয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়নি কিংবা তারা কোনো দুর্নীতি হতে দিয়েছেন এ নিয়েও কোনো আলোচনা বা সমালোচনা হয়নি। এটাকেই বলা হয়েছিল ‘সেফ এক্সিট’। এখন প্রশ্ন উঠছে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারাও কি সেই একই ধরনের ‘সেফ এক্সিট’ চাইছেন?—এই আলোচনা এখন জোরালোভাবে চলছে।

সম্প্রতি নাহিদ ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অভ্যন্তরীণ সংকটের কথা তুলে ধরেছেন। তার ভাষায়, উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ফেলেছেন। তারা নিজেদের ‘সেফ এক্সিট’-এর কথা ভাবছেন। এটি আমাদের ভোগাতে হয়েছে এবং আরো ভোগাতে হবে। যদি তারা মনে রাখতেন যে তাদের নিয়োগকর্তা হলো গণ-অভ্যুত্থানের শক্তি, যারা রাজপথে জীবন দিয়েছে, আহত হয়েছে—তাহলে আজ এই বিচ্যুতি হতো না।

নাহিদ ইসলাম তার বক্তব্যে স্বীকার করেন, রাজনৈতিক দল ও উপদেষ্টাদের প্রতি অতিরিক্ত বিশ্বাসই ছিল বড় ভুল। আমাদের উচিত ছিল ছাত্র নেতৃত্বকে শক্তিশালী করা। সরকারে গেলে সম্মিলিতভাবে যাওয়া, না গেলে বিচ্ছিন্নভাবে থাকা।

মাসুদ কামাল বলেন, ‘দুই দিন আগে বিসিবির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। এই লোকের ঝামেলার শেষ নাই। এত ছোট বয়সে এত বড় বড় দায়িত্ব দেওয়ার ফলে সে যে কি পরিমাণ বিতর্ক সৃষ্টি করেছে তা ভাবাই যায় না। আসিফ মাহমুদ যেখানে হাত দিয়েছে সেখানেই বিতর্ক। যদি অন্তর্বর্তী সরকারের মিনিমাম সেন্স থাকত তাহলে আসিফ মাহমুদকে সবার আগেই বিদায় করত। এর পুরো দায় কিন্তু সরকারের ওপরই বর্তাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এলজিডি উপদেষ্টা হিসেবে আসিফ মাহমুদ নিজের প্রভাব খাটিয়ে নিজ এলাকায় বিপুল পরিমাণ উন্নয়ন বরাদ্দ নিয়েছেন—যা অন্তত ১০টি জেলার মধ্যে কোনো জেলাই পাননি। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি নিজ এলাকার আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর সেই কারণেই এত বেশি বরাদ্দ দিয়ে তিনি স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। এই ধরনের কর্মকাণ্ডই দেখায়—এমন অনেক উপদেষ্টার ভবিষ্যতে ‘সেফ এক্সিট’-এর প্রয়োজন হবে। কারণ, যখন নির্বাচনে জামানত হারাবেন তখন তারা কোথায় যাবেন? তখনই হয়তো ‘সেফ এক্সিট’-এর পথ খুঁজবেন। আগেভাগেই বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করে রাখার চেষ্টা করবেন।’

তিনি আরো বলেন, শুধু আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধেই যে এ ধরনের অভিযোগ উঠবে তা নয়—‘সেইফ এক্সিট’-এর আলোচনা আরো অনেক উপদেষ্টাকে ঘিরেও হবে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দুর্নীতি, অর্থপাচারসহ বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা বলেছেন, উপদেষ্টারা অনেকেই সেফ এক্সিট খুঁজছে এবং আমার মনে হয় সেফ এক্সিট খুজতে উপদেষ্টাদের খুব কষ্ট করতে হবে না। কারণ ম্যাক্সিমাম উপদেষ্টা ডুয়েল সিটিজেনশিপ নিয়ে চলছেন। সো তাদের একটা বড় অংশই দেশের বাইরে অটোমেটিক্যালি চলে যেতে পারবেন। শুধু দেশের বাইরে তো না বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দেশগুলোতেই তারা আবারও ফিরে যাবেন। সো এজন্য তাদের খুব একটা এক্সিট রুট খুঁজতে খুব কষ্ট করতে হবে তেমনটিও না।

গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেছেন, এনজিও উপদেষ্টারা যেদিন শপথ নিয়েছেন সেদিনই গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পথ খুলেছে। এটাকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। নির্বাচন বানচালের মধ্যদিয়ে যদি অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়, তাহলে তার দায়ভার নাহিদ ইসলামকেও নিতে হবে।

মাসুদ কামাল বলেন, এভাবে কোনো দেশ সংস্কার করা যায় না। অযোগ্য ও দুর্নীতিবাজ মানুষদের দিয়ে দেশ সংস্কারের কথা বলা অনুচিত — তারা রাজনীতিবিদদের বদলায় কীভাবে, সেটা বোঝাতে বিদেশ থেকে কিছু ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী এনে কি সংস্কার সম্ভব? যদি এসব করা হয়, তাহলে তোমরা কেন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবে?

তিনি আরো বলেন, অধিকাংশ উপদেষ্টা দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে চলেছেন, তাই তাদের এক বড় অংশ সহজেই দেশের বাইরে চলে যেতে পারবেন। এমনকি বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও তারা ফিরে যেতে পারবেন এবং বড় ধরনের কষ্ট পেতে হবে না। আমরা বার বার প্রতারিত হতে চাই না। এই সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্তত ১৫ দিন আগে তাদের পাসপোর্ট জব্দ করা উচিত। এরপর তদন্ত করে দেখতে হবে—কাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ আছে। যদি কেউ নির্দোষ প্রমাণিত হয় তবে তাকে মুক্তি দিতে হবে; আর দোষী হলে তাদেরকে অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে। আমরা সব দুষ্ট লোককে বিচারের মুখোমুখি দেখতে চাই; দুষ্ট লোক কেন দায়িত্বে থাকবে, তা আমরা মেনে নেব না—আর এটাই দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের দাবি।

পুরোনো সংখ্যা

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
%d bloggers like this: