রাজশাহী-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি সংবাদ সম্মেলনে
দেশের সাইবার নিরাপত্তায় উদীয়মান তরুণ উদ্যোক্তা মোঃ জাহিদুল ইসলাম
সভাপতি মোঃ ইউসুফ পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক জি এম রোকনউদ্দীন রায়েদ আকন
গোদাগাড়ীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের উপজেলা কমিটি গঠন
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া- দুর্গাপুর) আসনে জামায়াতের বিশাল মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা
কোচিংয়ে অগ্রিম কোর্স ফি বাতিল ও মাসিক বেতন নির্ধারণসহ ১১ দফা দাবিতে মানববন্ধন
মানবতার আলোকবর্তিকা ডি এ পারভেজ — ন্যায় ও মানবাধিকারের অগ্রযাত্রী
রাজশাহীতে যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
খুলনায় দৈনিক ভোরের দর্পণ অফিসে চুরি, নগদ অর্থ ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র লোপাট
গাজীপুরে রিভেরি রিসোর্টে অবাধে চলছে নারী ব্যবসা, মাদক ও জুয়ার আসর — এলাকাবাসীর মানববন্ধন ও রিসোর্ট বন্ধের দাবি

মো. মানিক হোসেন : রাজশাহীর পবা উপজেলার বামুনশিকড় গ্রামে শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকালটা শুরু হয়েছিল স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু সকাল ৯টার পর পুরো এলাকা নিমিষেই নেমে যায় শোকের ছায়ায়। দুটি ঘরে ঝুলন্ত চারটি প্রাণহীন দেহ—এক মা, এক বাবা, এক শিশু ছেলে আর কোলে ওঠার বয়সের এক কন্যা। দেয়ালের এক কোণে রাখা একটি সাদা কাগজ, কয়েকটি শব্দে বন্দি এক জীবনের দীর্ঘ কষ্টের ইতিহাস।
নিহতরা হলেন—মিনারুল ইসলাম (৩০), তার স্ত্রী সাধিনা বেগম (২৮), ছেলে মাহিম (১৩) এবং মেয়ে মিথিলা (১৮ মাস)। মাহিম স্থানীয় খড়খড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল। জীবনের পথে যে বয়সে হাসি-খুশি ভরা দিন কাটানোর কথা, সেই বয়সে সে বিদায় নিল এমন এক পথে যেখান থেকে আর ফেরার উপায় নেই।
পুলিশ জানিয়েছে, একই বাড়ির দুটি আলাদা ঘরে ঝুলছিল মরদেহগুলো। এক ঘরে মা-মেয়ে, অন্য ঘরে বাবা-ছেলে। এ দৃশ্য দেখে প্রথমে স্থানীয়রা ভেবেছিল কোনো ভয়ঙ্কর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু মরদেহের পাশ থেকে পাওয়া একটি চিরকুট পুরো ঘটনার ইঙ্গিত দেয়।
চিরকুটে লেখা ছিল—
“আমি নিজ হাতে সবাইকে মারলাম। এই কারণে যে, আমি যদি মরে যাই, তাহলে আমার ছেলে-মেয়ে কার আশায় বেঁচে থাকবে। কষ্ট আর দুঃখ ছাড়া কিছুই পাবে না। আমরা মরে গেলাম ঋণের বোঝা নিয়ে আর খাওয়ার অভাবে। তাই আমরা বেঁচে থাকার চেয়ে মরে গেলাম, সেই ভালো।”
শব্দগুলো পড়তে পড়তে কাগজ ভিজে যাচ্ছিল উদ্ধারকারীদের চোখের জলে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, মিনারুল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দৈনিক মজুরির কাজ করতেন। আয় অনিয়মিত ছিল, অথচ ব্যয় ছিল স্থায়ী। কয়েক মাস ধরে কাজও পাচ্ছিলেন না। একদিকে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়া, অন্যদিকে ধারদেনা শোধের চাপ—সব মিলিয়ে পরিবারটি অভাবের গভীর খাদে পড়ে গিয়েছিল।
গ্রামের এক বৃদ্ধা চোখ মুছতে মুছতে বললেন,
“ওরা খুব ভালো মানুষ ছিল, কিন্তু অভাবের কাছে হার মানলো। এই দুনিয়ায় হয়তো আর জায়গা পেল না।”
বাড়ির সামনে জড়ো হওয়া মানুষের মুখে বারবার ভেসে আসছিল একটাই কথা—”আমরা যদি আগে বুঝতে পারতাম!” অনেকেই বলছিলেন, তারা চাইলে হয়তো সাহায্য করতে পারতেন, কিন্তু মিনারুল পরিবারের কষ্টটা কাউকে বোঝাতে চাননি।
এভাবেই লুকিয়ে লুকিয়ে জমা হচ্ছিল হতাশা, যেটা একদিন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিভিয়ে দিল চারটি জীবন।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আবু সুফিয়ান বলেন, “মরদেহের পাশে যে চিরকুট পাওয়া গেছে, ধারণা করা হচ্ছে তা নিহত মিনারুলের লেখা। তবে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্টের পর প্রকৃত কারণ আরও স্পষ্ট হবে।”
বাংলাদেশে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো প্রায়ই অর্থনৈতিক চাপে ভুগছে। মহামারি-পরবর্তী সময়ে কর্মসংস্থানের ঘাটতি, মুদ্রাস্ফীতি আর ঋণের চাপ মিলিয়ে অনেকেই হতাশার গভীরে ডুবে যাচ্ছে। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রামীণ এলাকায় কার্যত অনুপস্থিত।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, আত্মহত্যা কখনোই সমস্যার সমাধান নয়। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজন সামাজিক সংহতি, পারস্পরিক সহমর্মিতা, আর সহজলভ্য মানসিক সহায়তা সেবা।
চিরকুটের শেষ লাইনে মিনারুল লিখেছিলেন—
“আমি চাই সবাই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।”
দুঃখজনক সত্য হলো—যে মানুষটি নিজের পরিবারের জীবন শেষ করে দিয়ে অন্যদের ভালো থাকার কামনা করেছিলেন, তিনি নিজে ভালো থাকার সুযোগ পাননি।
আজ রাজশাহীর এই চারটি প্রাণ চলে গেছে, কিন্তু তাদের গল্প থেকে আমাদের শেখার আছে—কষ্ট ভাগ করে নেওয়া, সময়মতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া, আর কাউকে নিঃশব্দে মৃত্যুর পথে ঠেলে না দেওয়া।
আপনার মতামত লিখুন :