মো. মানিক হোসেন : ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের (জুলাই বিপ্লব) পর থেকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক চাঁদাবাজি নতুনভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। স্বচ্ছতা ও দমননীতি নিয়ে নিবেদিত সংস্থা Transparency International Bangladesh (TIB)‑র সাম্প্রতিক গবেষণা প্রকাশ করেছে যে, ঢাকায় ৫৩টি পরিবহন টার্মিনাল ও স্ট্যান্ড থেকে দৈনিক ২.২১ কোটি টাকা চাঁদাবাজি হচ্ছে ।
এই প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ১২১ জন এবং আহত ৫,১৮৯ জন । তার মধ্যে বিএনপি‑র বিরুদ্ধে সব থেকে বেশি (৯২%) সহিংসতার অভিযোগ, এর পর আসে আওয়ামী লীগ (২২%), জামায়াত‑ই‑ইসলাম (৫%), এবং নতুন গঠিত National Citizen Party (NCP) মাত্র ১%–এ ।
বিশ্লেষকেরা ‘King’s Party’–এর পরিভাষায় NCP‑কে আখ্যায়িত করেছেন, যা সরকারী সহযোগিতায় গঠিত বলে মনে করা হচ্ছে । তবে TIB‑এর রিপোর্টে উল্লেখ আছে যে এই নতুন দলটিও রাজনীতির অবক্ষয় থেকে অব্যাহতি পায়নি; ফান্ডিং অস্বচ্ছতা, muscle power ব্যবহারের প্রবণতা, সম্পত্তি দখল ও চাঁদাবাজি—সবই এ‑দলে বিদ্যমান ।
এই সব তথ্য একত্রে বিচার করলে পরিষ্কার দেখা যায় যে, রাজনৈতিক চাঁদাবাজি এখন এক ধরনের জাতীয় সমস্যা, নির্দিষ্ট কোনো দলই একা দত্তক করেছে না; বরং বিএনপি‑র অংশগ্রহণ সবচেয়ে বেশি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াত‑ই‑ইসলামও উল্লেখযোগ্যভাবে যুক্ত, এবং NCP‑ও এই অনৈতিক প্রবণতার মধ্যে যুক্ত হচ্ছে ।
বিএনপির ভূমিকা: TIB‑এর ৯২% সহিংসতার তথ্য নিশ্চিত করে যে, ওই সময়ের রাজনৈতিক দৃশ্যপটের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সক্রিয়ভাবে চাঁদাবাজিতে জড়িত দল হচ্ছে বিএনপি ।
আওয়ামী লীগের অবস্থান: যদিও এই দলটি বর্তমানে নিষিদ্ধ ও শরণের বাইরে, তবুও তাদের ক্ষমতা শূন্য হয়ে গেলে অস্তিত্বে থাকা রাজনৈতিক চক্রগুলো তাদের পদচিহ্নে চলতে থাকে ।
নতুন দলের ক্ষমতা: NCP‑র ‘King’s Party’ উপাধি এবং চাঁদাবাজিতে তাদের অংশগ্রহণ একটি আশঙ্কাজনক প্রবণতা নির্দেশ করে—ওই দলও পার্থিব রাজনৈতিক সংস্কৃতির পুরোনো রীতি অনুসরণ করছে ।
২০২৪–২০২৫ সালের বিশ্লেষণে, প্রামাণ্য তথ্যসমূহ নির্দেশ করে। বিএনপি : সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত, নেতিবাচক শীর্ষে। আওয়ামী লীগ ও জামায়াত‑ই‑ইসলাম: উল্লেখযোগ্যভাবে অংশগ্রহণ, যদিও মাত্রা কম। NCP: নবগঠিত হলেও পুরোনো অপপ্রথা অনুসরণ করছে এবং চাঁদাবাজিতে অংশগ্রহণ করছে।
এই প্রেক্ষাপটে, রাজনৈতিক সংস্কারে প্রয়োজন : সচেতন ও কঠোর প্রতিরোধ(national watchdog), নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা, TIB‑র মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তি বৃদ্ধি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ।
আপনার মতামত লিখুন :