ট্রাম্পকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে একগুচ্ছ চুক্তি করল ভারত
বেগম জিয়াকে লন্ডন নেয়া হবে কি না সিদ্ধান্ত রাতে
রাজশাহীর দুর্গাপুরে আলেম সমাজকে নিয়ে জামায়াতের উলামা সমাবেশ অনুষ্ঠিত
বিভ্রান্তিকর যোগদানের সংবাদের প্রতিবাদে পানছড়িতে জামায়াতের সংবাদ সম্মেলন
ঢাকায় ৪.১ মাত্রার ভূমিকম্প
রাজশাহীতে সাংবাদিক জাহিদের দাদির ইন্তেকাল, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার গভীর শোক
ভারতের সঙ্গে সামরিক চুক্তি রাশিয়ার সংসদে অনুমোদিত
প্রবাসীদের ৬০ দিন রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই ফোন ব্যবহারের অনুমতি
জাতি আগামী নির্বাচন নিয়ে গর্ব করবে: ড. মুহাম্মদ ইউনূস
হন্ডুরাসের সাবেক প্রেসিডেন্টকে কারাগার থেকে মুক্তি দিলেন ট্রাম্প

মো. মানিক হোসেন : বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এক ঐতিহাসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন নতুন এক নাম—নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনুস। দেশের প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসিত হচ্ছেন। অন্যদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিশ্বমাধ্যমে আলোচিত হচ্ছেন ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে—গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রশ্নে তার সরকারের ভূমিকা নিয়ে চলছে তীব্র সমালোচনা।
ড. মুহাম্মদ ইউনুস ইতিপূর্বেই আন্তর্জাতিক মহলে মানবিক অর্থনীতির প্রবক্তা ও দারিদ্র্য বিমোচনের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। তবে অন্তর্বর্তী সরকারে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর তার অবস্থান আরও সুদৃঢ় হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমে তাকে “Bangladesh’s Moral Transition Leader”, “Hope for Democratic Revival”, এবং “The People’s Statesman” হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য গার্ডিয়ান, লে মোঁদে ও দ্য ইকোনমিস্ট সম্প্রতি তাকে নিয়ে ইতিবাচক সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট, এমনকি ওআইসি ও আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রতিনিধিরাও তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ রূপান্তরের প্রশংসা করেছেন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কূটনৈতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “ইউনুসের নেতৃত্ব অন্তর্বর্তী বাংলাদেশকে স্থিতিশীলতা ও বিশ্বনন্দিত গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনছে।”
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ইতিহাসে দীর্ঘমেয়াদি শাসনকালের অধিকারী একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তার সময়কালে দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ডিজিটালাইজেশন ও নারীর ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়। তবে তার সরকারের শেষ সময়টিতে মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা ও নির্বাচনী স্বচ্ছতা নিয়ে যে বিতর্ক উঠেছিল, তা আজ আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রে।
যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে—ভোটাধিকার হরণ, বিরোধীদের দমন, বিচারব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ এবং গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ। এইসব বিষয় নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২০২৪ ও ২০২৫ সালের রিপোর্টে কঠোর সমালোচনা করে।
বিশ্ব গণমাধ্যমেও তার শাসনামলের শেষ দিকটি উপস্থাপিত হচ্ছে ‘authoritarian legacy’ হিসেবে। নিউইয়র্ক টাইমস এক বিশ্লেষণে লেখে—”শেখ হাসিনা উন্নয়ন এনেছেন ঠিকই, কিন্তু গণতন্ত্রের মূল কাঠামো দুর্বল করে ফেলেছেন।”
ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকেই দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো পুনর্গঠনে ইতিবাচক পদক্ষেপ লক্ষ্য করছে আন্তর্জাতিক মহল। সব দলের সঙ্গে সংলাপ, ভোটার তালিকার হালনাগাদ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের রূপরেখা প্রণয়ন, বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ—এইসব পদক্ষেপ তাকে আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বস্ত একজন নেতৃত্বে পরিণত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, “আমরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে শুভেচ্ছা জানাই। ড. ইউনুসের নেতৃত্বে আমরা ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন আশা করছি।”
অন্যদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল ও তার মিত্রদের কয়েকজন নেতা এখনো আইনি প্রক্রিয়ায় মুখোমুখি অবস্থানে আছেন। একাধিক দুর্নীতির মামলা বিচারাধীন রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও গুরুত্ব পাচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়ছে—এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, নাগরিক সমাজ ও পেশাজীবীদের বিবৃতিতে। দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, “নেতৃত্বে যখন একজন বিশ্বনন্দিত মানুষ আসেন, তখন দেশের জন্য সম্মান ও আস্থার দিগন্ত খুলে যায়।”
অপরদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামল নিয়ে চলছে বিতর্ক, বিশ্লেষণ ও আত্মসমালোচনা। দেশের কয়েকটি শহরে গণশুনানিতে অংশগ্রহণকারীরা অতীত প্রশাসনের জবাবদিহিতা দাবি করছেন।
ইউনুসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে। একাধিক রাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও উন্নয়ন চুক্তি পুনরায় আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি এবং জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থাগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে।
এমনকি প্রবাসী বাংলাদেশিরা সোচ্চারভাবে এই সরকারকে সমর্থন জানাচ্ছেন। লন্ডন, নিউইয়র্ক ও টরন্টোতে আয়োজিত সভায় তারা বলেন, “আমরা চাই এই নেতৃত্ব নির্বাচনের মাধ্যমে স্থায়ী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করুক।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সময় বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার মুখ ছিলেন, কিন্তু তার দীর্ঘ শাসনকালে যে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছিল, তা শেষ পর্যন্ত তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে। অন্যদিকে, ড. মুহাম্মদ ইউনুস একজন অরাজনৈতিক অথচ উচ্চমানসম্পন্ন নৈতিক নেতৃত্ব হিসেবে আবির্ভূত হয়ে আজ বাংলাদেশের জন্য একটি বিশ্বসম্মত গ্রহণযোগ্যতার নাম।
বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের এখন নতুন একটি মুখ—ড. ইউনুস। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ কি সত্যিই একটি ন্যায়ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাজ গড়তে পারবে? সময়ই তার উত্তর দেবে।
তথ্যসূত্র: The Guardian, The New York Times, Amnesty International, UN Reports, Le Monde, U.S. State Department, Al Jazeera, Grameen Archives)
আপনার মতামত লিখুন :