ট্রাম্পকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে একগুচ্ছ চুক্তি করল ভারত
বেগম জিয়াকে লন্ডন নেয়া হবে কি না সিদ্ধান্ত রাতে
রাজশাহীর দুর্গাপুরে আলেম সমাজকে নিয়ে জামায়াতের উলামা সমাবেশ অনুষ্ঠিত
বিভ্রান্তিকর যোগদানের সংবাদের প্রতিবাদে পানছড়িতে জামায়াতের সংবাদ সম্মেলন
ঢাকায় ৪.১ মাত্রার ভূমিকম্প
রাজশাহীতে সাংবাদিক জাহিদের দাদির ইন্তেকাল, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার গভীর শোক
ভারতের সঙ্গে সামরিক চুক্তি রাশিয়ার সংসদে অনুমোদিত
প্রবাসীদের ৬০ দিন রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই ফোন ব্যবহারের অনুমতি
জাতি আগামী নির্বাচন নিয়ে গর্ব করবে: ড. মুহাম্মদ ইউনূস
হন্ডুরাসের সাবেক প্রেসিডেন্টকে কারাগার থেকে মুক্তি দিলেন ট্রাম্প

এসএনএ আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর (Bureau of Labor Statistics – BLS) কমিশনার ডা. এরিকা ম্যাকএন্টারফারকে চাকরিচ্যুত করার ঘোষণা দিয়ে এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। মূলত জুলাই ২০২৫ সালের চাকরির প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে ‘তথ্য বিকৃতির’ অভিযোগ তুলে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন। তবে এই পদক্ষেপকে রাজনৈতিক প্রতিশোধ এবং সরকারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার নিরপেক্ষতায় হস্তক্ষেপ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
২০২৫ সালের ১ আগস্ট, ট্রাম্প তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ এক পোস্টে লেখেন, “আমাদের দেশের চাকরির সংখ্যা এখন বাইডেনের নিযুক্ত ডা. এরিকা ম্যাকএন্টারফার তৈরি করছেন। তিনি ভুল এবং বিকৃত তথ্য দিচ্ছেন, যা রিপাবলিকানদের এবং আমাকে খারাপ দেখানোর জন্য সাজানো।”
ট্রাম্প আরও বলেন, “আমাদের দরকার প্রকৃত এবং নিরপেক্ষ পরিসংখ্যান। আমি একজন দক্ষ ও যোগ্য নতুন কমিশনার খুঁজে আনব।”
অভিযোগের সূত্র হল ২০২৫ সালের জুলাই মাসের চাকরির প্রতিবেদন, যেখানে দেখা গেছে মাত্র ৭৩,০০০টি নতুন চাকরি যুক্ত হয়েছে। পূর্বাভাস ছিল ১,০৫,০০০ চাকরির। একইসঙ্গে, মে ও জুন মাসের তথ্য পুনর্মূল্যায়নের ফলে দেখা যায়, অতিরিক্ত ২,৫৮,০০০ চাকরির হিসাব বাদ দেওয়া হয়েছে।
“এই রিপোর্ট পরিকল্পিতভাবে সাজানো হয়েছে আমাকে ও আমার দলকে হেয় করতে,” সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্য করেন ট্রাম্প। তিনি আরও অভিযোগ করেন, “২০২৪ সালের নির্বাচনেও এরিকা ভুয়া চাকরির সংখ্যা দিয়ে কামালা হ্যারিসকে সহায়তা করেছিলেন।”
ট্রাম্প দাবি করেন, ২০২৪ সালের নভেম্বরে নির্বাচনের পরে হঠাৎ করে চাকরির সংখ্যা প্রায় ৮ থেকে ৯ লাখ কমিয়ে দেওয়া হয়। অথচ প্রকৃতপক্ষে শ্রম দপ্তর ২০২৪ সালের আগস্টে, অর্থাৎ নির্বাচনের তিন মাস আগেই, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে মোট চাকরির সংখ্যা ৮১৮,০০০ কমিয়ে সংশোধন করেছিল। এটি ছিল বিগত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সংশোধন।
ডা. এরিকা ম্যাকএন্টারফার ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সিনেট কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তিনি একজন অভিজ্ঞ শ্রম অর্থনীতিবিদ, যিনি দুই দশকেরও বেশি সময় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল প্রশাসনে কাজ করেছেন। তিনি পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের জনশুমারি দপ্তর এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ছিলেন।
বিএলএস (BLS) একটি স্বাধীন ও পেশাদার পরিসংখ্যান সংস্থা, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরতে নিরপেক্ষ তথ্য প্রদান করে।
বিএলএস-এর সাবেক কমিশনার ও বিশেষজ্ঞরা একজোট হয়ে ট্রাম্পের অভিযোগকে ভিত্তিহীন এবং ক্ষতিকর বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক কমিশনার উইলিয়াম বিচ বলেন, “কমিশনার নিজে তথ্য তৈরি করেন না, বরং বিস্তৃত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের পর প্রস্তুত রিপোর্ট প্রকাশ করেন মাত্র। এটি একটি বিকেন্দ্রীকৃত ও কঠোরভাবে নিরীক্ষিত প্রক্রিয়া।”
সাবেক চিফ ইকোনমিস্ট হেইডি শিয়েরহোলজ বলেন, “এই অভিযোগ একটি পরিসংখ্যানিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি চরম অবমাননা। এখানে শত শত কর্মী চাকরির প্রতিবেদন তৈরিতে নিয়োজিত থাকেন। কেউ এককভাবে তথ্য পরিবর্তন করতে পারে না।”
আরেক সাবেক কমিশনার কিথ হল বলেন, “কমিশনার রিপোর্টের খসড়া প্রকাশের আগ মুহূর্তে তথ্য দেখতে পান। তথ্য বিকৃতির কোনো সুযোগই নেই।”
তাদের মতে, “কমিশনার বা রাজনৈতিক নেতৃত্ব চাইলে একা একা কোনো সংখ্যা পরিবর্তন করতে পারে না। পুরো সংস্থাটি একসঙ্গে কাজ করে, যার মধ্যে প্রচুর যাচাই-বাছাই ও যাচাই-সুনিশ্চয়তা পদ্ধতি রয়েছে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, নিজের প্রশাসনে থাকা অবস্থায় ট্রাম্প কখনো এই তথ্যব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। বরং যখন তথ্য তার পক্ষে গেছে, তখন তিনি ‘চাকরির সংখ্যা রেকর্ড মাত্রায়’ বলে প্রচার করেছেন।
কিন্তু নির্বাচনের বছরগুলোতে, যখনই কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়েছে বা পূর্বাভাসের চেয়ে কম এসেছে, তখনই তিনি পরিসংখ্যান সংস্থাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়ে তুলছেন বলে অভিযোগ উঠছে।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন আন্তর্জাতিক শুল্কনীতি এবং অভিবাসন কঠোরতা প্রযুক্তি খাতে ব্যাপকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
বিশেষ করে অর্ধপরিবাহী, বৈদ্যুতিন পণ্য এবং সফটওয়্যার উন্নয়ন খাতে চীনের উপর শুল্ক বাড়ানোর কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে এবং কর্মী ছাঁটাই করেছে। ফলে প্রযুক্তি খাতে কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে, যা জুলাই মাসের চাকরির রিপোর্টেও প্রতিফলিত হয়েছে।
বিশ্লেষক ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, সরকারি পরিসংখ্যানিক প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপ এবং পেশাদার কর্মকর্তার অপসারণ একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করছে।
“ট্রাম্প প্রশাসন সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতা ধ্বংস করে নিজের রাজনীতিকে শক্তিশালী করতে চায়,” বলেন ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের সিনিয়র ফেলো এলেন কার্টার। “যদি আজ শ্রম পরিসংখ্যান বিকৃতির অভিযোগ তোলা হয়, কাল সে ভোটের ফলাফল নিয়েও একই কথা বলবে।”
ট্রাম্প এখনো নতুন কমিশনারের নাম ঘোষণা করেননি। এদিকে, ডা. ম্যাকএন্টারফারের বরখাস্তকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম, সিভিল সার্ভিস সংগঠন এবং পরিসংখ্যানিক সংস্থাগুলোর মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা এবং জনগণের উপর আস্থা বজায় রাখতে হলে এমন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যভিত্তিক গণতন্ত্রে সত্য, নিরপেক্ষতা এবং প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতাই যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে সেখানে আইন ও ন্যায়ের শাসন হুমকির মুখে পড়ে।
এই বরখাস্ত কি ছিল কেবল রাজনৈতিক নাটক? নাকি এটি এক নতুন যুগের সূচনা—যেখানে তথ্যও ক্ষমতার দাসে পরিণত হবে?
তথ্যসূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস, রয়টার্স, ওয়াশিংটন পোস্ট, ট্রুথ সোশ্যাল, শ্রম দপ্তর রিপোর্ট, ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন।
আপনার মতামত লিখুন :