এসএনএ ডেস্ক : গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে এস এম সৌরভ (২২) নামের এক সৈনিক গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। রোববার (১ জুন) ভোর ৫টার দিকে সেনানিবাসের সেন্ট্রাল ওয়ার্কশপ এলাকায় এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃপক্ষ।
নিহত সৈনিক সৌরভ ঝিনাইদহ জেলার বাসিন্দা ছিলেন এবং রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসের সেন্ট্রাল ওয়ার্কশপে কর্মরত ছিলেন। ঘটনার সূত্রপাত হয় একটি মোবাইল ফোনের অর্থ লেনদেনকে কেন্দ্র করে।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, একই ওয়ার্কশপে কর্মরত ল্যান্স কর্পোরেল ইয়াসির আরাফাতের মোবাইল ফোনে থাকা ১৪,০০০ টাকা নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেন সৈনিক সৌরভ। মোবাইলটি ফেরত দিতে গিয়ে ইয়াসির আরাফাতের হাতে ধরা পড়েন তিনি। পরে এ বিষয়ে সামরিক নিয়ম অনুযায়ী তাকে নজরদারিতে রাখা হয়।
ঘটনার দিন রোববার ভোরে সৌরভ ওয়াশরুমে যাওয়ার অনুমতি চান। দায়িত্বরত প্রহরী গার্ড দিয়ে তাকে ওয়াশরুমে নিয়ে যান। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও তিনি ওয়াশরুম থেকে বের হননি। একাধিকবার ডাকাডাকির পরও কোনো সাড়া না পেয়ে প্রহরীরা সন্দেহ করেন।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে প্রহরীরা ওয়াশরুমের দরজা ভাঙার চেষ্টা করেন। কিন্তু দরজা ভেঙেও সৌরভকে ওয়াশরুমের ভেতরে খুঁজে পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে একজন প্রহরী ওয়াশরুমের সাইড জানালাটি খোলা দেখতে পান এবং জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখতে পান—ভবনের কনস্ট্রাকশন অংশে বাঁশের সাথে গলায় গামছা পেঁচানো অবস্থায় ঝুলছে সৌরভের নিথর দেহ।
তাৎক্ষণিকভাবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয় এবং সৈনিকের মরদেহ উদ্ধার করে সেনানিবাসের মেডিকেল ইউনিটে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিক তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করেছে সেনাবাহিনী।
সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র জানান, ‘‘প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলেই মনে হচ্ছে। তবে মৃত্যুর পেছনে আরও কোনো কারণ রয়েছে কি না, তা জানার জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিহত সৈনিকের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে।’’
সৌরভের আত্মহত্যার ঘটনাটি নিয়ে সেনানিবাসে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সহকর্মীদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, সৌরভ সাধারণত চুপচাপ থাকতেন, কিন্তু এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেবেন তা কেউ ভাবেননি।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ১৪ হাজার টাকার ঘটনায় একজন সৈনিক এতটা চাপে পড়ে আত্মহত্যা করতে পারে কিনা। কেউ কেউ এর পেছনে মানসিক চাপ, অপমানজনিত পরিস্থিতি এবং নির্যাতনের সম্ভাবনার কথাও বলছেন।
সেনাবাহিনী বলছে, তদন্ত শেষে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে এবং প্রকৃত সত্য উদঘাটনে কোনো ধরনের গোপনীয়তা রাখা হবে না।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সৈনিক সৌরভের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ করা হয়নি।
এই আত্মহত্যার ঘটনাটি শুধু একটি মৃত্যুই নয়, বরং সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ পরিবেশ, দায়িত্ব পালনের চাপ এবং অপমানজনিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। একদিকে দায়িত্বশীলতা, অন্যদিকে মানবিক সহানুভূতির ভারসাম্য—এ ধরনের ট্র্যাজেডি যেন আর কোনো সৈনিকের জীবনে না নামে, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন ও সতর্ক হতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :