মো. মানিক হোসেন : শহরের বোয়ালিয়া থানাধীন হাদির মোড়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এবং রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠেছে চারতলা বিশিষ্ট একটি বহুতল ভবন। এলাকাবাসী ও প্রতিবেশীদের আপত্তি এবং একাধিক লিখিত অভিযোগ সত্ত্বেও নির্মাণকাজ থামানো হয়নি, যা স্থানীয়দের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, মো. জজমেন আলী (৫৪) নামে এক ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সুযোগ নিয়ে মাত্র ছয় মাসের মধ্যে এই ভবন নির্মাণ করেছেন। ভবনটি ইমারত নির্মাণ বিধিমালা লঙ্ঘন করে তৈরি হওয়ায় এটি স্থিতিশীল নয়, এবং যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রতিবেশী সাহাবুদ্দিন অভিযোগ করেছেন, তার জমির ১০ ফুট জায়গা দখল করে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, যা তার বাড়ির নিরাপত্তা ও গ্যাস লাইনের ওপর হুমকি তৈরি করেছে।
স্থানীয়রা বারবার আরডিএ এবং প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সামিয়া আক্তার নামের এক প্রতিবেশী আদালতে ১৪৫ ধারায় মামলা দায়ের করেছেন, যেখানে আদালত উক্ত স্থানে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও নির্মাণকাজ অব্যাহত থাকে এবং শেষ পর্যন্ত বহুতল ভবনটি সম্পন্ন হয়।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বহুতল ভবনটির কাঠামো দুর্বল এবং এটি যে কোনো সময় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সামিয়া আক্তার অভিযোগ করেছেন, ভবনটি তার জমির একাংশ জবরদখল করে তৈরি হয়েছে, যা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। অন্য এক প্রতিবেশী এমতেহ আল কাইয়ুম থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন, যেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে, ভবন নির্মাণের সময় তিনি বাধা দিলে তাকে হুমকি দেওয়া হয়।
আরডিএ’র অথরাইজড অফিসার (অতি: দা:) মো. আব্দুল্লাহ আল তারিক জানিয়েছেন, তিনি নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এবং বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। তিনি আরও জানান, আরডিএ ১৫ মে ২০২৪-এ ইমারত নির্মাণ আইন ১৯৫২-এর ৩(খ) ধারায় মো. জজমেন আলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। কিন্তু সেই নোটিশ কার্যকর না করেই ভবন নির্মাণকাজ শেষ করা হয়েছে।
এত অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞা ও আইনি প্রক্রিয়া থাকার পরও কীভাবে এই ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়রা। তারা মনে করেন, প্রশাসনের নিরব ভূমিকা এবং দুর্বল মনোভাবের কারণেই এই ধরনের বেআইনি নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে।
নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, ভবন নির্মাণে নীতিমালা অনুসরণ না করলে তা শুধু নির্দিষ্ট কয়েকজনের জন্য নয়, পুরো এলাকার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। বিশেষ করে ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে নিয়ম না মেনে ভবন নির্মাণ করা হলে মারাত্মক প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে।
রাজশাহীর সচেতন নাগরিকরা এখন আশায় রয়েছেন, প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে এবং অবৈধ ভবনটি ভেঙে ফেলার মাধ্যমে এলাকাবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। তারা আরও চান, ভবিষ্যতে এমন অনিয়ম বন্ধ করতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হোক, যাতে কেউ আইনের তোয়াক্কা না করে এভাবে জননিরাপত্তার ঝুঁকি সৃষ্টি করতে না পারে।
আপনার মতামত লিখুন :