সর্বশেষ :

রাজশাহীতে সাংবাদিকের ওপর হামলা: ন্যায়বিচার কি অধরাই রয়ে যাবে?


অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশের সময় : মার্চ ৯, ২০২৫ । ৯:৪৪ অপরাহ্ণ
রাজশাহীতে সাংবাদিকের ওপর হামলা: ন্যায়বিচার কি অধরাই রয়ে যাবে?

মো. মানিক হোসেন : রাজশাহী শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কার্যালয়। প্রশাসনিক কাজের জন্য এখানে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসেন। অথচ এখানেই এক মাস আগে ঘটে যায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা—পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় প্রকাশ্যে এক সাংবাদিকের ওপর হামলা ও তার মোবাইল ফোন ছিনতাই করা হয়।

ঘটনার শুরু এবং ভয়াবহ মুহূর্ত

গত ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১টার দিকে জাতীয় দৈনিক মুক্ত খবরদি মুসলিম টাইমস-এর ব্যুরো প্রধান সাংবাদিক লিয়াকত হোসেন উপজেলা কার্যালয়ের নিচতলায় সিঁড়ির পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ঠিক সেই সময়, ৫-৭ জনের একটি দল এগিয়ে এসে বলেন, “তুই সাংবাদিক, তোর কাছে উপরের ভিডিও আছে।” এরপর তারা মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। বাধা দিলে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত মোবাইল ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা।

এই ঘটনার একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, কিভাবে প্রকাশ্যে একজন সাংবাদিককে মারধর করে তার মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে, অবাক করা বিষয় হলো—এত বড় অপরাধ সংগঠিত হলেও এখনো কোনো অপরাধীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

প্রশাসনের রহস্যজনক নিরবতা

যে স্থানে হামলা হয়েছে, সেটি কোনো অন্ধকার গলি বা সুনসান এলাকা নয়। এটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন। অথচ, প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। ভিডিও ফুটেজ থাকার পরও কেন এখনো অপরাধীরা ধরা পড়েনি? নেপথ্যে কি কোনো প্রভাবশালী মহলের হাত রয়েছে?

রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাব, মুক্ত খবর ও দি মুসলিম টাইমস-এর সম্পাদকবৃন্দসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং দ্রুত দোষীদের গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন। তবে, তাদের প্রশ্ন “একজন সাংবাদিক যদি প্রশাসনের সামনেই হামলার শিকার হন, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?”

হামলার নেপথ্যে কি দরপত্র লুটের ঘটনা?

সেদিন, অর্থাৎ ৩ ফেব্রুয়ারি, ওই একই স্থানে হাট ইজারার দরপত্র লুটের ঘটনা ঘটে। উপজেলা প্রশাসন সে ঘটনায় একটি মামলা করলেও, হামলার মূল হোতারা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। সাংবাদিক লিয়াকত হোসেন কি সেই দরপত্র লুটের কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ধারণ করেছিলেন? সেই তথ্য ধামাচাপা দিতেই কি তার ওপর হামলা?

বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক সময় সত্য প্রকাশ পেলে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল সেটি রোধ করতে চায়। সাংবাদিক লিয়াকত হোসেন যদি দরপত্র লুটের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও ধারণ করে থাকেন, তাহলে সেই দুর্নীতিবাজ চক্রই হয়তো তাকে থামিয়ে দিতে চেয়েছিল।

সাংবাদিকতার ঝুঁকি: পেশাগত নিরাপত্তা কোথায়?

সাংবাদিকরা সবসময় সত্যের সন্ধানে থাকেন। দুর্নীতি, অপরাধ ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়াই তাদের পেশাগত দায়িত্ব। কিন্তু বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করলে হামলার শিকার হওয়ার ঘটনা এখন প্রায় নিয়মিত হয়ে উঠেছে।

এই ঘটনার পর রাজশাহীর সাংবাদিকরা আতঙ্কে রয়েছেন। তারা বলছেন, “যদি প্রশাসনের ভবনের সামনেই এমন হামলা হয়, তাহলে ফিল্ডে কাজ করতে গিয়ে আমাদের নিরাপত্তা কে দেবে?”

ন্যায়বিচার কি মিলবে?

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই হামলার বিচার কি আদৌ হবে? নাকি এটি সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যাবে? সাংবাদিক সমাজ, সুশীল সমাজ ও সাধারণ নাগরিকদের এখনই সোচ্চার হতে হবে। প্রশাসন যদি সত্যিকার অর্থে দোষীদের আইনের আওতায় না আনে, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের অপরাধের পথ সুগম হবে।

যতক্ষণ পর্যন্ত হামলাকারীদের গ্রেফতার না করা হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই ঘটনার প্রতিবাদ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। কারণ, আজ একজন সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন, কাল যে কোনো সাধারণ নাগরিকও একই ধরনের ঘটনার শিকার হতে পারেন। তাই, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই এখন সময়ের দাবি।

পুরোনো সংখ্যা

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
%d bloggers like this: