মো.মানিক হোসেন : রাজশাহীতে রোগীদের চিকিৎসার জন্যে গড়ে উঠেছে বৈধ অবৈধ চিকিৎসা কেন্দ্র। সঠিক তদারকির অভাবে রোগীদের জীবন বিপন্ন। কখন কাকে দিয়ে অপারেশন করিয়ে রোগীর মৃত্যু নিশ্চিত করছে তা বোঝা মুশকিল। বর্তমান ডাক্তারদের চিকিৎসা অবহেলায় ডাক্তার যে সেবক তা ভুলতে বসছে রোগীরা। হারিয়ে ফেলছেন আস্থার জায়গা। ডাক্তার শব্দ হয়ে উঠছে ব্যবসায়ী কসাই। এমন ঘটনার শিকার ভুক্তভোগী এক পরিবার। রাজশাহী পুলিশ কোয়ার্টারের বিপরীতেই দ্বিতীয় তলায় পদ্মা ক্লিনিক। সম্প্রতি এই ক্লিনিকে দফায় দফায় এক প্রসূতির সিজারের অপারেশন করার পরও বাঁচানো সম্ভব হয়নি। ওই ক্লিনিকে ভর্তি করানোর ঠিক ২২দিনের ব্যবধানে এই প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়। ভুল চিকিৎসার পর থেকেই ওই ক্লিনিকের ডাক্তার নার্স পালাতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার।
জানা গেছে, গত মাসের ৮ তারিখ মঙ্গলবার মাহমুদা নামের এই প্রসূতি নারী পদ্মা ক্লিনিকে ডা. শিপ্রার কাছে সিজার করাতে আসেন। ভর্তি হওয়ার পরদিন বুধবার সকাল ১টার সময় ডা. শিপ্রার মাধ্যমে সিজার হয়। সিজারের পর রাতে সেলাই থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। রক্তক্ষরণ শুরু হলে কর্মরত নার্সকে জানান মাহামুদার পরিবার। নার্সকে জানানোর পরে তারা একটু ধৈর্য ধরতে বলেন চিকিৎসকরা। তারপরেও যন্ত্রণা ও রক্তক্ষরণ বাড়তে থাকে। অবস্থা অবনতির দিকে গেলে মাহামুদার পরিবার ডাক্তারকে খোঁজ করতে শুরু করেন। কিন্তু সেখানে তাঁরা কোন ডাক্তারের খোঁজ পাননি।
পরদিন বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় ডাক্তার আসলে সমস্যার কথা জানান ভুক্তভোগী পরিবার। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ আবারও অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন । আবারও অপারেশন শেষ করলেও প্রসূতির অবস্থার অবনতি হয়। ডাক্তারকে জানান রুগীর অবস্থা ভালো না। তখনই ক্লিনিক থেকে ডাক্তারসহ সকলেই পালানোর মত অবস্থা। প্রসূতিকে মূমুর্ষ অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১দিন থাকার পর প্রসূতির অবস্থা উন্নত না হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতাল এভার কেয়ারে ভর্তি করা হয়। সেখানে ৩দিন লাইভ সাপোর্টে থাকার পরে অবস্থার উন্নতি না হলে চিকিৎসা খরচ ব্যয়বহল হওয়ার কারনে সেখান থেকে ঢাকা পপুলার ধানমন্ডি-২ ভর্তি করানো হয় এই প্রসূতিকে। সেখানে তিনি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ৩১অক্টবর বৃহস্পতিবার আনুমানিক সকাল সাড়ে দশটায় মৃত্যু বরণ করেন।
এবিষয়ে প্রসূতির ভাই মো. মাফিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. ফাহিম, ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডা. নাদিয়া আজিম, ডা. ফারজানা এবং ডা. ইয়াহিয়া ফেরদৌস আলম আবির এই মৃত্যুর জন্য দায়ী। আসলে এরা ডাক্তার কিনা সন্দেহ। এই ক্লিনিকে আর কেউ যেন ভুল অপারেশনে মৃত্যু না হয়। অবশ্যই এই মৃত্যুর বিচার চাই। শিশুটি বেঁচে আছে কিন্তু মা ছাড়া। কতবার অনুরোধ করেছিলাম ভালো ভাবে চিকিৎসা করার। টাকা পয়সা দিয়েও চিকিৎসাক্ষেত্রে যত্ন দেখলাম না।
এদিকে রোগীর পরিবার গণমাধ্যমকর্মীদের স্মরণাপন্ন প্রতিবেদকরা অনুসন্ধানে গেলে পদ্মা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তথ্য দিতে অস্বীকার করেন। তথ্য দিতে দিনের পর দিন হয়রানি করতে থাকে। পরে তথ্য দিতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানায়। তবে মৌখিকভাবে তথ্য দিতে চায় যা লিখে নিতে বলেন। সেই ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মীরা গোপনে অডিও ভিডিও রেকর্ড করেন।
প্রসূতির মৃত্যুর বিষয়ে পদ্মা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের সিজারে কোন সমস্যা হয়নি। ডাক্তার ডা. শিপ্রা সিজার করেছেন উনি ভালো বলতে পারবেন। আমাদের ধারণা রোগীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বেশি সমস্যা হয়েছে। পরে তার পরিবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি করে। সেই থেকে আমরা আর কিছুই জানি না।
মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ অপারেশনের টাকা নিলেও মানবতার খাতিরে ছাড়ও দিয়েছে বলে জানায়। এই ক্লিনিকে রাতে ডাক্তার থাকে না এমন অভিযোগও ওঠে। এবিষয়ে জানতে চাইলে বলেন সেই দিন মৌ নামে ডাক্তার ছিল, কিন্তুু ডা. মৌয়ের কোন তথ্য দিতে পারবো না।
এবিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, আমার কাছে এরকম কোন অভিযোগ আসেনি। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানে অপারেশন, ইনজেকশন এগুলো নিয়ে কাজ হবে সেখানে সবসময় ডাক্তার থাকতে হবে। আর ডাক্তার থাকে না বিষয়টি জানলাম। আমি খুব শীঘ্রই অভিযান করব এবং অভিযোগের সত্যতা পেলে পদ্মা ক্লিনিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
আপনার মতামত লিখুন :