নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর পুঠিয়ায় দাবি করা যৌতুকের ২লক্ষ টাকা দিতে না পারায় স্বামী হাসানের শারীরিক মানসিক নির্যাতনের পর স্ত্রী নাসরিন খাতুনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এমন অভিযোগে গত রোববার ( ১৫ সেপ্টেম্বর) পুঠিয়া থানায় মৃত নাসরিনের ভাই হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মৃত স্ত্রী নাসরিন খাতুন দুর্গাপুর থানার হোজা অনন্তকান্দি মৃধাপাড়া গ্রামের মৃত আজিমুদ্দিনের মেয়ে। অভিযুক্তরা হলেন পুঠিয়ার বাঙ্গালপাড়া গ্রামের মো. মতিউর রহমান মতির ছেলে মো. হাসান (৪২), স্ত্রী মোছা. সুফিয়া বেগম (৬২), নাতনী মোছা. মায়া খাতুন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন যাবত যৌতুকের জন্য স্বামী মো: হাসান স্ত্রী নাসরিনের ওপর অমানবিক নির্যাতন করে আসছিলো। বিবাহের পর আমার বোনের সংসারে জান্নাত (০৪) নামে একটি মেয়ের জন্ম হয়। অনেকবার নির্যাতনের পর চিকিৎসা নিয়েও সংসার করার তাগিদে বার বার হাসানের সংসারে ফিরে গেলেও পুনরায় একই নির্যাতন সহ্য করতে হয় নাসরিনকে। গত ২৪ জুলাই রড দিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত ক্ষতস্থানে আবারও আঘাত করে হাসান ও তাঁর সহযোগীরা। স্ত্রী নাসরিনের পরিবারকে ফোন দিয়ে যৌতুকের ২ লক্ষ্য টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু পরিবার থেকে টাকা দিতে না পারায় স্ত্রী নাসরিনের বাপের বাড়ির লোকজনকে ফোন দিয়ে নিয়ে যেতে বলে। এরপর নাসরিনের মা নাসরিনকে সেখান থেকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে পুণরায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় পঙ্গু হাসপাতাল, ঢাকায় রেফার্ড করা হয় এবং পরবর্তীতে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয। সেখানেই গত ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুর পৌনে ২ টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাসরিন মারা যান।
স্ত্রী নাসরিনের ভাই হাবিবুর রহমান বলেন, অভিযুক্ত মো হাসান, হাসানের মা সুফিয়া বেগম ও মেয়ে মোছা. মায়া খাতুন (১৯) যৌতুকের দাবি করে আমার বোনের কাছে। যৌতুক আনতে পারবে না বলায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে তাঁরা। অসুস্থ অবস্থায় আমার বোনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। কিন্ত তাঁরা কেউ আসেনি এমনকি উন্নত চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া নিয়ে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করার প্রয়োজনে মৃত নাসরিনের এন আইডি কার্ড চাইলেও তারা দেয়নি। পরে আমার বোনকে রামেকে ভর্তি করি। মেডিকেলে ভর্তি অবস্থায় আমার বোন আমাকে সব কথা জানায়। পরে, স্বামী হাসানের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে সব বিষয়ে নিশ্চিত হই। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বোন জামাইয়ের পরিবারের কেউ যোগাযোগ পর্যন্ত করেননি।
এজাহারে জানা যায় মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা । নাসরিন খাতুনের সাথে হাসানের ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক বিবাহ হয়। বিবাহের পর সংসারে জান্নাত (০৪) নামে নামের একটি মেয়ের জন্ম হয়। বিবাহের পর বিভিন্ন সময় হাসান নাসরিনের কাছে যৌতুক হিসেবে নগদ টাকা ২ লক্ষ টাকা দাবি করে। এর জন্য ঘরে লেগে থাকে অশান্তি। অনেক সময় সংসার ছেড়ে বাপের বাসায় এসে উঠতে হয়। শেষবারের মত যৌতুক দাবি করে বাসা থেকে তাকে নামিয়ে দেয়। নাসরিন তারপরও সংসার করতে বাসায় ঢুকলে শ্বাশুড়ী মোছা. সুফিয়া বেগম নাসরিনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করতে থাকে। ওই সময় হাসান নাসরিনের বুকে লাথি মারেন। মায়া খাতুন নাসরিনের চুলের মুঠি ধরে টানা হ্যাঁচড়া করে। তখন সুফিয়া বেগম পাথরের শিল দিয়ে নাসরিনের বুকের বাম পাশে আঘাত করলে নাসরিন জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। নাসরিন মাটিতে পড়ে থাকা হাসান লোহার রড দিয়ে ডান পায়ের উরুতে একাধিক আঘাত করে রক্ত জমাট বাঁধা ও হাড় ভাঙ্গা জখম করে বাড়ী থেকে হাসান বের হয়ে যায়। ওইদিনই রাত ১০টায় নাসরিনের পা ফুলে গেলে ব্যাথায় কাতরাতে থাকলে।
সেসময় হাসান নাসরিনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ গালে চরথাপ্পড় মারে। পরেদিন সকাল ৮টায় নাসরিন বিছানা হতে উঠতে না পেরে কান্নাকাটি শুরু করলে এবং তাঁর শারীরিক অবস্থা অবনতি হাসান ও তাঁর ভাবি মোছা. মলিনা বেগম (৩৭) মিলে নাসরিনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে নাসরিনের ভাইকে সংবাদ দিলে নাসরিনের কাছে ছুটে আসেন বাপের বাড়ির লোকজন। প্রথমবার মেডিকেলে প্রায় ১৭/১৮ দিন মেডিকেলে চিকিৎসা চলে। মেডিকেলে ভর্তি থাকা কালীন নাসরিন তবুও সংসার করবে বলে নাসরিন কিছুই জানায় না।অন্যদিকে, নাসরিনের শ্বশুরবাড়ির লোকজন জানায় টয়লেটে যেতে গিয়ে নাসরিন আঘাত প্রাপ্ত হয়। দিনের পর দিন নাসরিনের শারীরিক অবস্থা বেগতিক হলেও নাসরিনকে দেখতে না এসে পুনরায় যৌতুক দাবি করে। যৌতুক না দিলে অযত্নে অবহেলা ও চিকিৎসা না করে মেরে ফেলবে বলে ফোন কলে স্বামী হাসান হুমকি দেয়। অযত্নে অবহেলায় নাসরিনের শারীরিক অবস্থা আরো খারাপ হলে নাসরিন যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে কান্নাকাটি করে।
এদিকে নাসরিনের অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত ডাক্তার নাসরিনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় পঙ্গু হাসপাতাল ঢাকার শ্যামলীতে রেফার্ড করেন। নাসরিনের পরিবার নাসরিনকে সেখানে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত ডক্টর নাসরিনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। পরে নাসরিনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে নাসরিন বহিঃবিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ সেপ্টেম্বর বেলা ১ টা ৪৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে নাসরিনের ভাই নাসরিনের মৃতদেহ নিয়ে পুঠিয়া থানায় আসেন। সেই থানায়এজাহার দায়ের করেন।
নিহত নাসরিনের মৃত্যু সম্পর্কে জানতে চাইলে অস্বীকার করেন। তবে, এ বিষয়ে পুঠিয়া থানার ইনচার্জ বলেন, স্ত্রীকে নির্যাতনের দায়ে স্বামী ও তার পরিবারের নামে মামলা করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তের পর সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :