সর্বশেষ :

বেড়েছে নারী নির্যাতন, কমেনি যৌতুকের ছোবল


অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশের সময় : জুন ১৩, ২০২৪ । ১:৩৩ পূর্বাহ্ণ
বেড়েছে নারী নির্যাতন, কমেনি যৌতুকের ছোবল

মো. মানিক হোসেন: সমাজে যৌতুক প্রথা একটি অভিশাপ। এখনও চলমান গোপনে ও প্রকাশ্যে যৌতুক প্রথা। এই যোতুকের দায়ে ধ্বংস হচ্ছে সংসার। পরবর্তীতে বিয়ে হচ্ছে না ঘর ভাঙা নারীর। নারীকে আখ্যা দেয়া হচ্ছে পতিতা। প্রমাণ স্বরূপ একটা দৃষ্টান্ত রাজশাহীর রুমা ওরফে পুতুল নামের এক নারী। যিনি যৌতুকের চাপে ও নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে করেছেন মামলা। মামলা করায় ভুগছেন প্রাণ সঙ্কটে। নিরাপত্তা খুঁজছেন দুয়ারে দুয়ারে।

 

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল ( ১)  আদালতে স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে গত মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) একটি মামলা দায়ের করেন নগরীর রাজপাড়া থানাধীন দাশ পুকুর এলাকার বাসিন্দা রুমা ওরফে পুতুল। মামলায় স্বামী পারভেজ আলম সহ তাঁর পরিবারের মোট ৫ জনকে আসামী করা হয়েছে এই মামলাশ। মামলার বিবরনী ও  স্ত্রীর দেয়া বর্ননানুযায়ী স্ত্রী রুমা তার পিতার বসতবাড়ীর প্রাপ্ত অংশ বিক্রি করে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা স্বামী ও তাঁর পরিবারকে দেয়। যে টাকা দিয়ে রুমার স্বামী একতালা বাড়ি নির্মান করেছেন।

টাকা শেষ হয়ে গেলে আসামীবৃন্দ রুমাকে পুনরায় ২ লক্ষ টাকা দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। এ বিষয় নিয়ে রুমার মা তার জামাতা ও তাঁর পরিবারের লোকজনের সাথে আলাপ আলোচনা করতে আসলে পারভেজ ও তাঁর পরিবার আরও ২ লক্ষ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে।

কথা প্রসঙ্গে আসামী তার স্ত্রী রুমাকে মারধর করার একপর্যায়ে লোহার বালতি দিয়ে স্ত্রীর মাথায় আঘাত করে গুরুতরভাবে জখম করে। মামলার বিষয় নিয়ে রাজশাহী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল ( ১) আদালত ঘটনার সত্যতা যাচাই করা ও সে মোতাবেক প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার জন্য নওহাটা পৌরসভার মেয়র বরাবর একটি নোটিশ প্রেরণ করে।   আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক মেয়র উভয় পক্ষকে ডেকে ঘটনার বিষয় নিয়ে উপস্থিত স্বাক্ষীদের বক্তব্য  শোনার পরে  স্বামী পারভেজ স্ত্রী রুমা সহ তাঁর মা ভাই ও স্বাক্ষীকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে।

মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের জন্য রুমার ভাই শরিফ  পবা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি ( জিডি) করেন।

জিডির বিষয়ে রুমার ভাই জানান ” আমার বোন আদালতে মামলা দায়ের করেছে আদালত নওহাটা পৌরসভার মেয়রকে সত্যতা নিশ্চিত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নোটিশ দিয়েছিলো তারই প্রেক্ষিতে আমরা স্বাক্ষী নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলাম। শালিস বোর্ডে আমরা স্বাক্ষী দিয়ে বের হয়েছি তখনই  পারভেজ আমার ও আমার স্বাক্ষীর ওপর চড়াও হয়। গালাগালি ধাক্কা দেওয়া এমনকি স্বাক্ষী সুরজামালকে হত্যার হুমকি ও দেয়।

গৃহবধূ রুমার ভাই আরও জানান আমার বোন বাপের বসতভিটার প্রাপ্ত অংশ বিক্রি করে তার স্বামী ও শ্বশুর পরিবারের লোকজনকে ৯ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা দিয়েছে যার প্রমাণ স্বরুপ ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে লেখা-পড়া করা আছে। পারভেজের স্বাক্ষর করেছে। এখন সে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করছে এমনকি তার পরিবারের লোকজনও অস্বীকার করছে। টাকার জন্য আমার বোনকে বাসা থেকে বের করে দিয়ে মেসে রেখেছে। আমার বোনের কোন খোঁজ খবর নেই না।

সালিশে হত্যার হুমকির বিষয়ে স্বাক্ষী  ভ্যান চালক  সুর জামাল জানান, মেয়েটাকে (গৃহবধূ রুমা) আমার সামনে ওর স্বামী ও বাড়ির লোকজন মেরে বের করে দিয়েছে এটা স্বাক্ষী দেওয়ার জন্য আমি নওহাটা পৌরসভার কার্যালয়ে যায় স্বাক্ষী দিয়ে বের হবার সময় পারভেজ আমাকে গালাগালি ও মেরে ফেলার হুমকি দেয়, একপর্যায়ে সে আমার শার্টের কলার ধরে আমাকে ধাক্কা দেয়। তখন আমি আর মেয়ের ভাই পবা থানায় গিয়ে জিডি করি।

গৃহবধূ রুমা প্রতিবেদককে জানান, ” আদালত চত্বরে তার সাথে আমার পরিচয় তার পর সে ও তার পরিবার আমাকে ফুসলিয়ে পারভেজের সাথে বিয়ে দেয়। বিয়ের পরে আমি ১ লক্ষ টাকা দিয়েছি সেই টাকা দিয়ে সে মোটরসাইকেল কিনেছিলো,  সেটাও এখন বন্ধক রেখেছে। আমার বাপের সম্পত্তির আমার অংশ বিক্রি করে সংসারে সুখের আশায় আমি আমার স্বামী, শ্বশুর -শ্বাশুড়িকে নগদ ৯ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা দিয়েছি এখন তারা সেই টাকার কথা স্বীকার করছে না বরং আরও ২ লক্ষ টাকা দাবি করছে। টাকা দিচ্ছি না বলে গত ৪ মাস থেকে আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়ে একটা মহিলা মেসে রাখে।

সে আমার কোন খরচ দেয়না এমনকি খোঁজ খবর ও নেয়না। সেইদিন আমি আমার স্বামীর খোঁজ নিতে তাদের বাসায় গেলে আমার স্বামী পারভেজ সহ আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি ননদ সবাই মিলে মেরে বাসা থেকে বের করে দেয়। আমার স্বামী পারভেজ আমাকে লোহার বালতি দিয়ে মেরে  মাথা ফাটিয়ে দেয়। আমি যে ভ্যানে চড়ে সেখানে গেছিলাম সেই ভ্যান চালক সব দেখেছে।  সে পৌরসভাতে স্বাক্ষী দিলে পারভেজ তাকে ও আমার ভাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।  আমি শুনেছি আমার স্বামী আমাকে তালাক দিয়েছে তবে তালাকের কোন কাগজ পায়নি সে আমার টাকা পয়সা নিয়ে নি:স্ব করে দিয়েছে। আমি তার বিচার চাই।”

সালিশের বিষয় নিয়ে নওহাটা পৌরসভার সালিশ বোর্ডের সদস্য কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম বলেন আমার বাদি বিবাদী ও স্বাক্ষী সকলের কথা শুনেছি এবং সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করেছি আমাদের পৌরসভার শালিস বোর্ডের সভাপতি ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজিম উদ্দীন মোল্লা রিপোর্ট মেয়র মহোদয়ের মাধ্যমে আদালতে জমা দিবে। হুমকির বিষয় নিয়ে তিনি বলেন সেই সময় আমি ওয়াশ রুমে ছিলাম অফিসের অন্যান্যদের কাছে শুনেছি এবং থানা থেকে ফোন দিয়েছিলো তবে “ঘটনাটি  সত্য”।

এবিষয়ে নওহাটা পৌরসভার মেয়র জানান প্রতিবেদনটি ঈদের পরপরই আমি আদালতে জমা দিবো।

মামলা ও জিডির বিষয়ে গৃহবধূ রুমার স্বামী পারভেজ আলম বলেন ” আমার নামে মিথ্যা মামলা করেছে  আমিও স্ট্যাম্প জালিয়াতির মামলা করেছি, এগুলো সব মিথ্যা সাজানো। প্রাণ নাশের হুমকির বিষয়েটি অস্বীকার করে বলেন তারাই আমাকে তেরে মারতে এসেছে।”

পুরোনো সংখ্যা

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
%d bloggers like this: