সর্বশেষ :

বিশ্ব বাবা দিবস আজ

বাজান আর লাটসাহেব ডাক শুনতে চাই


অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশের সময় : জুন ১৮, ২০২৩ । ১০:০৬ অপরাহ্ণ
বাজান আর লাটসাহেব ডাক শুনতে চাই

মোঃ মানিক হোসেন : তখন টেট্টুল নাইলনের লুঙ্গি পরতাম। বয়স ৬/৭ হবে। ১৯৯৭-১৯৯৮ সাল হবে। আব্বা (নূর মোহাম্মাদ সরদার) তখন ভার বা বাহক কাঁধে করে দোকান নিয়ে যেতেন মীরপুর (জোলাপাড়া) এবং মাধনগর (মাদলাগর) হাট বারে।বায়নাকী দোকান। সপ্তাহে ৪ দিন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ফসলের মাঠে কাজ করতেন। দুপুরে খেয়ে গা জুড়িয়ে বেলা আড়াইটার সময় রওনা দিতেন হাটের উদ্দেশ্যে। যাওয়ার আগে মা’কে বলে যেতেন, মানিক স্কুল থেকে ফিরলে ব্যাগ নিয়ে হাটে পাঠিয়ে দিও। তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম। বাড়ি ফিরে চলে যেতাম হাটতে হাটতে। প্রায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা। খরার সময় ঘাটা (পথ) ব্যবহার করা হতো। বিলের মধ্যে দিয়ে ঘাটা ৷ কাল্লা কাটার ভয় ছিল তখন। সরু ঘাটা আর ঘাটার দু’ধারে ফসল। বন্যার সময় আব্বা নৌকা ব্যবহার করতেন। আব্বা ও মেজো আব্বা (মৃত আবদুল গফুর সরদার) দুই ভাই একসাথে যেতেন। মেজো আব্বা ছিলেন গ্রাম্য হোমিওপ্যাথি ডাক্তার। বিকেল ৫টায় আমিও পৌঁছে যেতাম আব্বার কাছে। চারদিকে বেচা বিক্রি হলেও আব্বার দোকানে কম হত। মন খারাপও লাগত। আব্বা বলতেন সন্ধ্যার দিকে বেচা বিক্রি হয় বাজান। পরে, আব্বা মাছ আর শাকসবজি বাজার করে ব্যাগ হাতে ধরিয়ে দিতেন। আর ১০ টাকা দিতেন জিনিস কিনতে। আমি কটকটি, কালাই, ঝুরি, সন্দেশ অথবা শরবত খেয়ে মেজো আব্বার কাছে যেতাম। তিনিও ৫/১০ টাকা দিতেন। আমি বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হতো। আব্বা ও মেজো আব্বা এশা’র আযান পর আসতেন আজ মেজো আব্বা নেই। ডাক্তার হওয়া সত্ত্বেও তিনি রোগাক্রান্ত হয়ে চলতি বছরের রমজান মাসের প্রথম দিন শুক্রবার না ফেরার দেশে চলে গেছেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের দুর্যোগ নেমে আসে। আব্বাও আজ স্ট্রোক করে ডান হাত ও পা অবশ প্রায়। আব্বা আমাকে বাজান বলে ডাকতেন। হাট শেষে রাতে বাড়ি ফেরার সময় চিনি ও তিলের তৈরি খাজা, চানাচুরসহ ইত্যাদি জিনিস নিয়ে আসতেন। রাতে এশা’র নামাজ পর ইসলামিক গল্প ও রাজা রাণী’র গল্প শোনাতেন। আব্বাকে জড়িয়ে কোলের মধ্যে শুয়ে জিনিস চিবাতাম আর গল্প কবিতা শুনতাম। কখন যেন ঘুমিয়ে পড়তাম। ভোরে আবার ডাকতেন।  তখন, আব্বা ফজর নামাজ পর ভোরের আলো ফোটার আগ পর্যন্ত আমার পাশে শুয়ে থাকতেন। মা মুড়ি মাখিয়ে দিতেন। বিল ভরা পানির সময়, মাছ ধরতে এবং তাল কুড়ানোর সময় নিয়ে যেতেন। কারেন্টের জালে সাপ বিঁধলে হাত দিয়েই খুলে দিতেন। এখন, খুব মনে পড়ে। কতইনা পরিশ্রম করেছেন আব্বা। তিনি আজ আর দূরন্ত শরীরে নেই। ভোর বেলা আর গোয়াল থেকে গরু গড়াতে বের করতে পারেন না। গরুকে খাবার দিতে পারেন না। পারেন না, লাঙ্গল মই কাঁধে আর গরু নিয়ে ফসলের মাঠে যেতে। মনের সাহস থাকলেও শরীরে আর কুলোয় না। নাতি নাতনিদের সাথে এখন বাড়ীতেই সময় কাটান। আমি বর্তমানে গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে কাজ করলেও বেতনভুক্ত নই। বেকার বলাই চলে। আফসোস হয়, আব্বার চিকিৎসার জন্য কিছু করতে পারছি না। আব্বা এখনও আমার পাশে আছেন। তবে দাঁড়িয়ে নেই। বলতে পারি না, “আব্বা বই কেনা লাগবে”। বলতে পারি না, “চলেন, বিলে না অনেক কাজ। বসে থাকলে হবে!”। আব্বা’কে অনেক মানুষ দেখতে আসেন। সবাই বলেন, বয়স হয়ে গেছে। আল্লাহ না করুক তিনি বেশিদিন থাকবেন না। বুক ফেটে যায়, তারা যখন আব্বার সামনেই এমন কথা বলেন। “আমি খুব ভালোবাসি আব্বা আপনাকে। আপনাকে দু-চোখ ভরে দেখা ছাড়া উপায় নেই। মহান আল্লাহ আপনাকে সুস্থ করে যেন দেন। আমি আপনাকে আমার মৃত্যুর সময় পর্যন্ত দেখতে চাই। আপনার মুখে বাজান আর লাটসাহেব ডাক শুনতে চাই, চলতে চাই আরও দূর বহুদূর।  শুনতে চাই সহজ সরল পথের গল্প।”

পুরোনো সংখ্যা

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০  
%d bloggers like this: