নিজস্ব প্রতিবেদক : বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার মিঠাখালী গ্রামে জমির জের ধরে হত্যাচেষ্টায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ১০ জনের নামে মোংলা থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছেন, ভোগদখলীয় সম্পত্তিতে জবর দখল নিয়ে এই মারপিটের গুরুতর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ২জন আসামীকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৩ মে) সকাল সাড়ে ৬টায় সোহরাব শেখ মামের এক ব্যক্তি ঘেরের কাজে সোনাখালী থেকে মিঠাখালী যাওয়ার পথে এমন ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন, সোনাখালী গ্রামের মোঃ শাহজাহান শেখ (৪০) এর ছেলে মোঃ শাহিন শেখ (২৮), মোঃ জমশেদ শেখে (৬০) এর ছেলে মোঃ মারুফ শেখ (৪০) ও মোঃ মাসুদ শেখ (৪২), মৃত আমজাদ শেখের ছেলে মোঃ মান্নান শেখ (৪০), মৃত নোয়াব আলী শেখের ছেলে জমশেদ শেখ, মোঃ মান্নান শেখের ছেলে মোঃ রিক্ত শেখ (২২), মোক্তার ফকিরের ছেলে নাজিম ফকির (২১) এবং মিঠাখালী গ্রামের মোঃ জাহাঙ্গীর সরদারের ছেলে মোঃ মোস্তাফিজ সরদার (৫০), ইমান আলী সরদারের ছেলে জাহাঙ্গীর সরদার (৫০) ও মোঃ জাহাঙ্গীর সরদারের ছেলে মোঃ জয়নাল সরদার (২৪)।
স্থানীয় সূত্রে ও মামলা সূত্রে জানা যায়, ওইদিন সোহরাব শেখ তাঁর মিঠাখালী গ্রামে ঘেরে যাওয়ার পথে সোনাখালী গ্রামের দক্ষিণ বিলের বড় ঘেরের কাছে পৌঁছালে তাঁর ওপর হামলা হয়। হামলাকারীরা বে-আইনীভাবে হাতে দা, লোহার রড, লাঠি সোটাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎই তারা সোহবার শেখের পথরোধ করে দাঁড়িয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। তখন সোহরাব শেখ তাদের গালিগালাজ করতে নিষেধ করলে জমশেদ শেখ হুকুম দিয়ে বলেন, শালাদের আজ জীবন শেষ করে দে। হুকুম পেয়ে শাহিন শেখ তার হাতে থাকা দা দিয়ে সোহরাব শেখকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার মাথায় কোপাতে থাকে। এতে করে সোহরাব শেখের মাথার বিভিন্ন স্থানে দা’য়ের কোপে গুরুতর জখম ও রক্তাক্ত হয়। এরপর সোহরাব শেখ ডাক চিৎকার দিয়ে রাস্তার ওপর পড়ে যায়। সোহরাব শেখের ডাক চিৎকার শুনে সোহরাব শেখের মেঝ ভাই শের আলী শেখ ঘটনাস্থলে আসলে হামলাকারীদের হাত থেকে সোহরাবকে উদ্ধার করতে এগিয়ে গেলে মাসুদ শেখ তার হাতে থাকা দা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে শের আলী শেখের মাথা লক্ষ্য করে কোপ মারে। ফলে, তাঁর মাথার ডান পাশে লেগে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। হামলাকারীদের মান্নান শেখ, শের আলী শেখকে হত্যার উদ্দেশ্যে দা দিয়ে কোপ মারে। সেই কোপে তাঁর মাথার বামে লেগে কেটে রক্তাক্ত জখম হয়।
তখন শের আলী শেখ মাটিতে পড়ে গেলে হামলাকারীরা লাঠি সোটা দিয়ে তাঁকে এলোপাথারী ভাবে মারপিট করতে থাকে। ফলে, শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। তখন ভুক্তভোগীদের ডাক চিৎকার শুনতে পেয়ে ভাগ্নে নুরনবী হাওলাদার ঘটনাস্থলে আসে। নুরনবী আসলে সকল আসামীরা তাকে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করে। ফলে, তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। একপর্যায়ে মোস্তাফিজ সরদার তার হাতে থাকা দা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথা লক্ষ্য করে কোপ মারে। ওই কোপে নূরনবীর মাথার বাম পাশে কানের ওপরে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়।
ঘটনাটি টের পেয়ে মিঠাখালীর জাহাঙ্গীর শেখ, শের আলী শেখের ছেলে আবু হানিফা শেখ (৩২), মোঃ ওয়াজেদ আলী হাওলাদারের ছেলে মোঃ শাহ আলম হাওলাদার (৪৫), শেখ আলী শেখের স্ত্রী নিলুফা বেগম(৪৫), স্বামী- শেখ আলী শেখসহ আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি ও সুযোগ পেলে ভুক্তভোগীদের ভোগদখলীয় সম্পত্তি জবর দখল ও পুনরায় মারপিটসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়।
পরে গ্রামের উপস্থিতিতে এবং সহযোগিতায় ভুক্তভোগীদের উদ্ধার করে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করানো হয়। সেখানে ভুক্তভোগী শের আলী শেখ ও নুরনবী হাওলাদারের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কর্তব্যরত ডাক্তার তাঁদের উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী শের আলী শেখ ও নুরনবী হাওলাদারকে এ্যাম্বুলেন্স যোগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ সম্পর্কে মোংলা থানার ওসি মোহাম্মাদ শামসুদ্দীন জানান, ঘটনার সত্যতা ঘটনাস্থলে গেলে বেরিয়ে আসবে। থানায় মামলা হয়েছে। দু’জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকীরা পলাতক। তাদের ধরার জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আপনার মতামত লিখুন :