মোঃ মানিক হোসেন :
রাজশাহীতে অক্ট্রয় মোড়ে সংবাদপত্র অফিস ভাঙচুর ও সাংবাদিক মারধর করার অভিযোগে একটি অভিযোগ ও পরবর্তীতে মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলায় একজন আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। ঐ মামলায় উল্লেখিত আরও ৫জন অভিযুক্ত ব্যক্তি ঐ ঘটনার সাথে জড়িত না এমনটি দাবী করেছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। এমন দাবিতে রোববার (৭ মে) দুপুরে স্থানীয় একটি হলরুমে একটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অন্যদিকে একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একই দিনে বিকেলে মহানগরীর অক্ট্রয় মোড়ে ‘রাজশাহীর সাংবাদিক সমাজ’ ব্যানারে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সাংবাদিকরা। এসময় পত্রিকা কার্যালয়ে হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার করা না হলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন সাংবাদিকরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক নুর হাসান রিংকু।
এসময় তিনি জানান, শুক্রবার (৫ মে) মহানগরীর অক্ট্র্রয় মোড়ে অবস্থিত পত্রিকা অফিসে হামলা চালানোর অভিযোগে আসাদুল হক দুখু নামের একজনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় বিলসিমলা এলাকার একজন বাদি হয়ে তাঁদের ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের নামসহ ৬জনের নাম উল্লেখ করে মতিহার থানায় মামলা করেন। যে ঘটনার সাথে তাঁরা কোন ভাবেই জড়িত নয়। এই মামলা মিথ্যা।
তিনি গণমাধ্যমে বলেন, আসন্ন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারি অক্ট্রোয় মোড় এলাকায় মতিহার থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ শেখ ও সৈকতের নেতৃত্বে নির্বাচনী প্রচারনা ক্যাম্প নির্মাণ করার সময় একজন নির্বাচনী ক্যাম্প করতে বাঁধা প্রদান করেন। সেইসাথে নির্বাচনী ক্যাম্প না করার জন্য বিভিন্ন হুমকি প্রদান করেন। আমরা জানতে পারি সেখানে একটি পুকুর জবর দখল করার পাঁয়তারা করছেন একজন সাংবাদিক। আমরা সেখানে নির্বাচনী ক্যাম্প করায় তার সেখানে বাঁধা হওয়ার আশঙ্কায় তিনি তার অফিসে হামলার ঘটনায় আমাদের জড়িয়ে এই নামে মামলা করিয়েছেন। আমরা এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ এমন মিথ্যা মামলা দেয়ার তদন্ত পূর্বক তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে রিংকু আরও বলেন, আমরা পত্রিকা অফিসে যাইনি সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই প্রমাণ পাওয়া যাবে। যেখানে যাইনি সেখানে পত্রিকা অফিস ভাঙচুর বা সাংবাদিকদের মারধরের প্রশ্নই আসেনা। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবীত বঙ্গবন্ধুর প্রাণের সংগঠন ছাত্রলীগের মহানগর থানা পর্যায়ে বিভিন্ন পদে সততার সঙ্গে দ্বায়িত্ব পালন করছি। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে প্রচারণা ও তাকে বিজয় করার জন্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছি। এই হয়রানি ও যড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলার কারণে আমাদের নৌকার পক্ষে প্রচারণায় বাঁধাগ্রস্থ হতে হচ্ছে।বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে রাজশাহী শহরের দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখে বিএনপি মনোভাব সম্পন্ন ব্যক্তিরা ঈর্ষান্বিত হয়ে নৌকাকে পরাজিত করার পাঁয়তারা করছে। মিথ্যা মামলা প্রদানকারীর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানান তিনি। সেই সাথে মিথ্যা মামলা থেকে প্রত্যাহার দাবি জানান।
সাংবাদিকদের মানববন্ধন ও সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দৈনিক সময়ের কাগজের স্থানীয় সম্পাদক আবু হেনা মোস্তফা জামান এবং সমাবেশ সঞ্চালনা করেন রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি ও রাজশাহী মহানগর প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক মঈন উদ্দিন।
এসময় বক্তব্য দেন রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মুহা: আব্দুল আউয়াল, দৈনিক রাজশাহীর আলো পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক এসএম আব্দুল মুগনী নীরো, রাজশাহী মহানগর প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও দৈনিক খোলা কাগজের স্টাফ রিপোর্টার মাসুদ রানা রাব্বানী প্রমূখ। এছাড়াও রাজশাহী মহানগর প্রেসক্লাবের দফতর সম্পাদক ইফতেখার আলম বিশালসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
রাজশাহীতে আয়োজিত সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, রাজশাহী হলো শান্তির নগরী। অথচ এই নগরীকে অশান্ত করতে একটি মহল নানা ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতার ছত্রছায়ায় একদল মাদক কারবারী ও সন্ত্রাসীরা গত শুক্রবার সন্ধ্যায় পত্রিকা কার্যালয়ে কাপুরুষোচিত হামলা চালায়। এসময় হামলাকারীরা কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় এবং কার্যালয়ে কম্পিউটারের ড্রয়ারে থাকা ৯৭ হাজার টাকা ও একটি হার্ডডিক্স লুট করে নিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, হামলাকারীরা একজন নারী সাংবাদিককে লাঞ্চিত করার চেষ্টা ও কয়েকজন সাংবাদিককে মারধর করে। এছাড়া একজন ক্যামেরাম্যানকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অবশ্য পরে তাকে মারধর করে ছেড়ে দেয় হামলাকারীরা।
এ ঘটনায় পত্রিকা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ঐদিন গভীর রাতে নগরীর মতিহার থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলা দায়েরের পরপরই পুলিশ মামলার এক প্রথম আসামি আসাদুল হক দুখুকে (৪২) গ্রেফতার করে। কিন্তু মামলার অন্য আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না।
সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা আরও বলেন, পত্রিকা কার্যালয়ে সশস্ত্র হামলা, লুটপাট ও অপহরণের সাথে জড়িত সব আসামিকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। তাছাড়া কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আসামিরা চিহ্নিত মাদক কারবারী ও সন্ত্রাসী। তারা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতার ছত্রছায়ায় আসামিরা পত্রিকা কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও একজন ক্যামেরাম্যানকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। যা স্বাধীন গণমাধ্যম ও স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপের শামিল।
আপনার মতামত লিখুন :