মোঃ মানিক হোসেন :
রাজশাহী সিটি সারা বিশ্বের দরবারে গ্রীন সিটি, ক্লীন সিটি ও এজুকেইশন সিটি হিসেবে জনপ্রিয়।দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে নান্দনিকতায় ভূয়সী প্রশংসিতও হয়েছে । এদিকে প্রাণের শহর রাজশাহীকে কর্মমুখর ও আরও নান্দনিক শহরে পরিণত করার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
বৃহস্পতিবার (৪ মে) নগর ভবনের সিটি হল সভাকক্ষে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান পরিষদের ১৩তম সাধারণ সভায় এমন অপেক্ষার কথা ব্যক্ত করেন রাসিক মেয়র।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও বর্তমান রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, আসন্ন সিটি নির্বাচনে জয়যুক্ত হলে কমপক্ষে ৫০ হাজার বেকার তরুণ-তরুণীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করা হবে। এজন্য সবাইকে একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
মেয়র লিটন বলেন, দুই মেয়াদে আমি মেয়র থাকাকালীন গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটির জন্য রাজশাহী সিটি করপোরেশন পরপর চার বার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। আমি পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হলে এই ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আরও অত্যাধুনিক সিটি গড়তে যা যা করা দরকার তা করব।
আসন্ন রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন লিটন। গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে পুনরায় আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশও করেন মেয়র লিটন।
মেয়র জানান , রাজশাহীতে বিসিক শিল্পনগরী-২ ইতোমধ্যেই গড়ে উঠেছে। সেখানে নারী উদ্যোক্তাদের কর্মসংস্থানের জন্য ৫০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনা জামানতে ঋণের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে রাজশাহীতে কেউ বেকার কিংবা কর্মহীন না থাকে।
আগামী ২১ জুন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে চতুর্থ বারের মতো আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২১ জুন নির্বাচনে বিজয়ী হতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
বর্তমানে রাজশাহীতে ব্যাপক উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে। এবার কর্মসংস্থান ও শিল্পায়নে জোর দেওয়া হচ্ছে। এবার কর্মসংস্থান ও শিল্পায়ন হবে ইনশাল্লাহ। রাজশাহীতে বিসিক শিল্পনগরী-২ এর কাজ শেষ হয়েছে। সেখানে ছোট ছোট কারখানা হবে। বড় ব্যবসা-বাণিজ্য ভারতের সাথে হতে পারে। ভারতের মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান থেকে রাজশাহী হয়ে ঢাকা পর্যন্ত নৌরুট চালু করতে উভয় দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলেছি। প্রথম পর্যায়ে ধূলিয়ান থেকে গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ পর্যন্ত নৌরুট চালু হবে। এরপর সুলতানগঞ্জ থেকে রাজশাহী পর্যন্ত। এটি হলে ভারত থেকে বিভিন্ন মালামাল দেশে আসবে, আবার আমাদের দেশ থেকে বিভিন্ন মালামাল ভারতে যাবে। এর মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে, অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
রাসিকের সুনাম অর্জনে বলেন, পরিবেশের ক্ষেত্রে যে সুমান অর্জন করেছি, আরো বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে সেটি বাড়াতে হবে। আমরা যেটুকু কাজ করতে পেরেছি, তা ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। দেশের মানুষ এখন জানে রাজশাহী সারাদেশের মধ্যে সেরা সুন্দর ও বসবাসযোগ্য শহর। রাজশাহীর সুনাম দেশের সীমানা পার হয়ে দেশের বাইরের দেশেও পৌছে গেছে। এই কৃতিত্ব আমাদের সবার।
শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানে ভারতের সাথে বাংলাদেশের যৌথ ব্যবসার মাধ্যমে রাজশাহীকে সমৃদ্ধ করার একটি বড় সুযোগ আছে। সেই সুযোগটিকে কাজে লাগাতো চাই। সেক্ষেত্রে পদ্মা নদীর নব্যতা ফিরিয়ে এনে ভারতের মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান থেকে রাজশাহী পর্যন্ত এবং পরবর্তীতে ঢাকা পর্যন্ত নৌরুট চালু করে বিভিন্ন মালামাল আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে রাজশাহীকে আরো উন্নত করতে চাই। রাজশাহী থেকে কলকাতা সরকারি ট্রেন ও বাস যোগাযোগ চালু করতে চাই। বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণে টেন্ডার হয়েছে, সেটি বাস্তবায়ন হবে। এখন শিল্পায়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।
শিল্পায়ন করতে ইতোমধ্যে রাজশাহী বিসিক শিল্পনগরী-২ এর কাজ শেষ হয়েছে। এখন প্লট বরাদ্দ প্রদান করা হবে। সেখানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কলকারখানা হবে। রাজশাহী সিটি আয়তন বাড়ানো হবে। রাজশাহীকে অর্থনৈতিকভাবে উপরে তুলে আনতে এই কাজগুলো করতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে রাজশাহীকে কর্মমুখর ও আরো নান্দনিক শহরে পরিণত করার অপেক্ষায় থাকলাম।
রাসিক মেয়র আরও বলেন, করোনাকালীন পরিস্থিতিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ও সহযোগিতায় এবং আমাদের নিজেদের উদ্যোগে রাজশাহীবাসীর সহযোগিতায় সিটি কর্পোরেশনের অর্থ থেকে দফায় দফায় খাদ্য, নগদ অর্থ, বিনামূল্যে ওষুধ, অক্সিজেনা মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌছে দিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিনামূল্যে করোনা ভ্যাক্সিন নাগরিকদের প্রদান করেছেন। সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্যকর্মীরা ভ্যাক্সিন প্রদানে এখন পর্যন্ত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে প্রায় দেড় বছর আমরা কোন কাজ করতে পারিনি। তখন অন্য কাজ বাদ দিয়ে শুধুমাত্র করোনা মোকাবেলা ও মানুষকে রক্ষা কাজ করতে হয়েছে। করোনার দুঃসময়ে অনেক সন্তানেরা বাবা-মায়ের লাশ ফেলে পালিয়ে গিয়েছিল। সে সময় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে লাশ করোনায় মৃত ব্যক্তিদের লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেছি।
সভায় রাসিকের অর্থ ও সংস্থাপন স্থায়ী কমিটির ৪টি প্রস্তাব, হিসাব নিরীক্ষা ও রক্ষণ স্থায়ী কমিটির ২টি, যোগাযোগ স্থায়ী কমিটির ২টি, নগর অবকাঠামো নির্মাণ ও সংক্ষরণ স্থায়ী কমিটির ৫টি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থায়ী কমিটির ২টি, পরিবেশ উন্নয়ন স্থায়ী কমিটির ৯টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা এবং স্বাস্থ্যরক্ষা ব্যবস্থা স্থায়ী কমিটির ৫টি, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন স্থায়ী কমিটির ৬টি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ২টি, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা স্থায়ী কমিটির ১টি, দোকান বরাদ্দ কমিটির ৪টি, ইজিবাইক, অটোরিক্সা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ কমিটির ৪টি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এছাড়া রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপিতে বর্ণিত অবকাঠামোসমূহের (শেখ রাসেল শিশু পার্ক, শেখ কামাল কনভেনশন হল এবং বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতি) নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট হতে অনুমোদন গ্রহণ, কিশোর ফুটবল একাডেমিকে আর্থিক সহায়তা প্রদান, দারিদ্রতা বিমোচনের লক্ষ্যে সিডিসি কর্তৃক তহবিল গঠন প্রসঙ্গে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভার শুরুতে গত ১২তম সাধারণ সভা হতে ১৩তম সাধারণ সভা পর্যন্ত দেশ-বিদেশের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, গণ্যমান্য ব্যক্তি, সমাজসেবক ও কর্পোরেশনের যে সকল কর্মকর্তা/কর্মচারী মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের বিষয়ে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
সভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতাসহ সকল শহীদ ও বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, রাসিক এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, গণ্যমান্য ব্যক্তি, সমাজসেবক ও কর্পোরেশনের যে সকল কর্মকর্তা/কর্মচারী মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন সোনাদিঘী জামে মসজিদের পেশ ইমাম ক্বারী মোঃ মামুন উর রশীদ।
আপনার মতামত লিখুন :