সর্বশেষ :

লাঘব হয়নি শ্রমিকের কষ্ট!


অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশের সময় : মে ১, ২০২৩ । ১০:৫৮ অপরাহ্ণ
লাঘব হয়নি শ্রমিকের কষ্ট!

মোঃ মানিক হোসেন :

মহা-মানবের মহা-বেদনার আজি মহা-উত্থান,
উর্ধ্বে হাসিছে ভগবান, নীচে কাঁপিতেছে শয়তান!- বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কুলি মজুর কবিতার শেষের বাক্য। জেনে বুঝেও শ্রমিকের তরে কাঁদে না যেন শোষিত শ্রেণির মন।কুকুরের মত ডেকে নিয়ে গিয়ে এখনও কাঁদায় সারাক্ষণ।

স্ত্রী সন্তান মা বাবার জন্য কিছুই করতে পারেননি এমন ভাবনা কুঁড়ে খায় বেশিরভাগ শ্রমিকেদের। মালিক শ্রমিকের সম্পর্ক থাকবে ভাতৃত্বের বন্ধন, এমনটি আশা প্রতিটি শ্রমিকের। আসলেই কি শ্রমিকের কষ্ট লাঘব হয়েছে!

সোমবার (১ মে) রাজশাহীর বিভিন্ন জায়গার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ জানালেন ক্ষোভের কথা।

নাসিম (২৩) রাজশাহী কলেজের একজন শিক্ষার্থী। মাস্টার্স করছেন এক বিষয়ের ওপর। দিনের বেলায় পড়াশোনা রাতের বেলা করেন কাজ। রাতে রিকশা চালিয়ে আয় হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। আয় নিয়ে কষ্ট না থাকলেও কষ্ট পান মানুষের ব্যবহারে।

তিনি বলেন, অনেক সময় ভদ্রা থেকে বর্ণালী যাবেন বলে স্যারেরা ওঠেন। ভাড়া ৩০ টাকা মিটানো হয়। অনেক সময় ৩০ টাকার জায়গায় ২০ অথবা ২৫ টাকা দেন। ন্যায্য ভাড়া চাইলে এলাকার ভয় দেখান। অনেক সময় ৩০ টাকা দিলেও আরও ভেতর গলিতে নিয়ে যান। হয়রানির শিকার হতে হয় অনেক সময়।

সাবিয়ার রহমান (২৭)। মাস্টার্স শেষ করে রাজমিস্ত্রীর কাজ করছেন। বাড়ী গোদাগাড়ী। সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকে রাজশাহী শহরে আসতেন কাজের উদ্দেশ্যে। ২০১০ সাল। তখন হেলপারের পারিশ্রমিক দিনে ২০০ টাকা হলেও পেতেন ১৫০ বা ১৭০ টাকা৷ এখন, তিনি রাজমিস্ত্রী হয়েছেন। এখন দিনে পারিশ্রমিক ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। বাড়ির মালিক অথবা কন্টাক্টারের অসদাচরণের কথা জানালেন।

তিনি বলেন, প্রায় মিস্ত্রি হেলপার ও কাজে আসা শ্রমিকের টাকা কেটে নেন। বাড়ির মালিক ৮ ঘন্টার বেশি সময় কাজ করান। আমরা শ্রমিক কিছুই বলতে পারিনা। আমাদের অসুখ বিসুখ হলে দেখার কেউ থাকে না। মে দিবস এলেই শ্রমিকদের কথা আলোচনা হয়। তবে, জাগ্রত হয় না বিবেক। মে দিবসে সংগঠন শুধু নাটক করে আর কিছু না।

আব্দুর রাজ্জাক (৩০)। বাড়ী বাগমারা উপজেলার বিরকয়া গ্রামে। কোম্পানি ও কর্মস্থলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। তিনি বলেন, থাকা খাওয়াতেই ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা চলে যায়। বিয়ে তো করা হয়নি এখনও। পরিশ্রম অনুযায়ী বেতন যেন অতি নগন্য। মে দিবস পালন শুধু ছুটি কাটানোর মত।

“শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি”- মহান মে দিবসের এ প্রতিপাদ্যের আলোকে শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্কের মাধ্যমে প্রকৃত উন্নয়ন নিশ্চিত করাই আমাদের অঙ্গীকার- এমন প্রতিপাদ্যে দৃঢ়তার সাথে শ্রমিক মালিকের কথা ব্যক্ত করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এমন মেসেজ পেয়ে বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত তুষার বলেন, টার্গেট পূরণ করতেই আয়ু কমে যায়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অর্ডার কাটতে হয়। সন্ধ্যার পর টাকা কালেকশন করতে হয়। ডিউটি ৮ ঘন্টার কথা থাকলেও কি ৮ ঘন্টা হয়! মালিকপক্ষ কতটা ভাবছেন আমাদের কথা?

রাহেলা (৩৫)। দূর্গাপুর উপজেলার জয়নগর রাস্তার কাজ করছিলেন। প্রতিমাসে সাড়ে ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা পান।

রাস্তা সংস্কার কাজে নিয়োজিত। তিনি জানান, স্বামী সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারেননি। কারন, স্বামীর উপার্জন সামান্য তাই রাস্তার কাজ শুরু করছেন। পুরুষ শ্রমিকের তুলনায় তাঁদের বেতন কম। এখনও সমাজে বৈষম্য রয়েছে। নারী পুরুষ সমান অধিকার নিশ্চিত করলে ভালো হয় বলে জানিয়েছেন।

তারপরও আশায় বুক বাঁধছেন সাধারণ শ্রমিকেরা। যেন, নিরাপত্তার সাথে কাজ ও সময় সহজলভ্য হয়৷ পারিশ্রমিক যেন ন্যায্য হয়।

পুরোনো সংখ্যা

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০৩১  
%d bloggers like this: