অনতিবিলম্বে নিঃশর্তে বাদশাকে ক্ষমা চাইতে হবে, বহিস্কৃত নেতাদের দাবি


অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশের সময় : মার্চ ১১, ২০২৩ । ১০:১৬ অপরাহ্ণ
অনতিবিলম্বে নিঃশর্তে বাদশাকে ক্ষমা চাইতে হবে, বহিস্কৃত নেতাদের দাবি

মোঃ মানিক হোসেন, রাজশাহী বিভাগীয় প্রতিনিধি :

রাজশাহীতে ওয়ার্কার্স পার্টির ২ নেতাকে বহিষ্কার করা করা হয়েছে। বহিষ্কার করার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটিতে সুপারিশ করতে পারে। কিন্তু, বহিষ্কার করতে পারেন না। এছাড়াও বহিষ্কৃত দুজন নেতার ওপর মিথ্যা দোষারোপ করা হচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দাবি জানিয়েছেন মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট এন্তাজুল হক বাবু ও জেলার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আকবর আলী।

সেই সাথে দলকে ধ্বংস করার এমন ষড়যন্ত্রের জন্য অনতিবিলম্বে নিঃশর্তে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাকে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

শনিবার (১১ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় লক্ষীপুর টিবি পুকুর ও জিপিওর উত্তর পার্শ্বে সাবেক ছাত্র নেতা এ্যাডভোকেট আবু রায়হান মাসুদের চেম্বারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

ভুক্তভোগী দুই নেতা জানান, দলের গঠনতন্ত্র ও আদর্শবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার মিথ্যে অপরাধে রাজশাহীর ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে দলের মহানগর কার্যালয়ে জেলা ও মহানগর কমিটির যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাঁদের দোষারোপ করা বলা হয়, দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা, কর্মীদের মধ্যে উসকানি-বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন দল।

এন্তাজুল হক বাবু বলেন, গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৪ দলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলাম না। বরং বিএনপি জামায়াত শিবিরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। এছাড়াও সম্প্রতি দলের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি; নৈরাজ্য ও বিভেদ তৈরি করার অপচেষ্টা কখনোই করিনি । আমি দলীয় কর্মীদের উসকানি ও বিভ্রান্ত করিনি, যা দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল হয়।

অন্যদিকে, আকবর বলেন, দলীয় পদ ব্যবহার করে আমার এলাকায় অবৈধ জমির ব্যবসা করে থানায় দেন-দরবারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত সুবিধা নিয়েছি বলে অভিযোগ করেছেন, কিন্তু এমন কোন থানা বা কেউ বলতে পারবে না। পার্টি অফিসের নামে জমি আত্মসাৎ করার অপচেষ্টা করেছি এমনও অভিযোগ করছেন।

প্রকাশিত এক সংবাদের তথ্যে জানা গেছে, এক বছর দুই বছর নয়। টানা ৩৩ বছর ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে ছিলেন রাজশাহীর আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু। সেই বাবুই এতদিন পর ওয়ার্কার্স পার্টি এবং পার্টির শীর্ষ নেতাদের আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। দলীয় ফোরামে এসব নিয়ে কথা বলার পর তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এন্তাজুল হক বাবু ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগর সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। বৃহস্পতিবার মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়েছে। এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পার্টির রাজশাহী জেলার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আকবর আলীকেও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আকবরও দুই দশকের বেশি সময় পার্টির সঙ্গে ছিলেন।

বহিস্কৃত নেতারা দাবি করে বলেন, ‘ওরা তো এভাবে বহিষ্কার করতে পারে না। এটা একটি গর্হিত কাজ করেছে। প্রথমে আমাকে নোটিশ করতে পারত। আমাকে বলতে পারত যে, আমি নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করছি। তাই শোকজ করা হলো। তা না করে বহিষ্কার করছে। এটা অন্যায় কাজ করেছে।’

এন্তাজুল হক বাবু আওয়ামী লীগে যোগ না দিলেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের একটি সভায় যোগ দিয়ে বক্তব্য দেন। এর কিছুক্ষণ পরই বাবুসহ দুজনকে ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে বহিষ্কারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। এই বহিষ্কারের কারণ কি তা জানতে চাইলে বাবু বলেন, ‘আজ থেকে ৬ মাস আগেই আমি বলেছিলাম যে, ওয়ার্কার্স পার্টি করব না। এই কারণে করব না যে, ওয়ার্কার্স পার্টি ১৪ বছর ধরে সরকারের সঙ্গে আছে। আমাদের কর্মসূচি কি? কি লড়াই করব আমরা? কিসের জন্য আমরা ১৪ দলের শরিক হয়ে থাকব এবং মানুষ আমাদেরকে আওয়ামী লীগের দালাল বলবে? কেন্দ্রীয় কমিটিতেও বলেছি, স্থানীয়ভাবেও বলেছি। আমাকে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। আমি ভায়া হয়ে কেন দালালি করব? সরাসরি আওয়ামী লীগেরই দালালি করব। এই হলো আমার কথা।’

ওয়ার্কার্স পার্টির আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাবু বলেন, ‘ওরা অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কথা বলে। তার জন্য লড়াই করতে হবে তো। কি লড়াই আছে ওয়ার্কার্স পার্টির? শ্রমিক-কৃষকের যে আজকে দুর্দশা, মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। এর জন্য কি লড়াই আছে? যদি লড়াই না থাকে তাহলে খামাখা আমি ওয়ার্কার্স পার্টি করব কেন?’

পার্টির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এন্তাজুল হক বাবু চার বছর আগে অনুষ্ঠিত রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৪ দলের প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছেন। এতদিন পর এই অভিযোগ নিয়ে বাবু বলেন, ‘চারবছর পরে এসে এটা কোন যুক্তিসঙ্গত কথা? প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে লিখেছে আমি নাকি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আইনজীবী সমিতির নির্বাচনেও ইব্রাহিম-শাজাহান প্যানেলের বিপক্ষে কাজ করেছি। রাজশাহী কোর্টের একটা অ্যাডভোকেটও কোনদিন বলল না, ওরা বলে দিল! আমি নাকি পদ-পদবী ব্যবহার করে সুবিধা নিয়েছি। কি সুবিধা নিয়েছি?’

ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার সমালোচনা করে এন্তাজুল হক বাবু বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ফজলে হোসেন বাদশার চেয়ে বেশি। আমি ১৯৭০ সালে রাজনীতি শুরু করেছি। শুরু করেছিলাম পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টিতে। তারপর কয়েকটা দল মিলে ১৯৯০ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি হলো। তখন আমরা আমাদের পার্টি বিলুপ্ত করে ওয়ার্কার্স পার্টিতে যোগ দিলাম। আমি যদি মঞ্চে বক্তব্য দেই, ওয়ার্কার্স পার্টির যিনি সেক্রেটারী তিনি রাজশাহীতে থাকতে পারবেন না।’

বাবু বলেন, ‘ফজলে হোসেন বাদশার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব বলে দিতে পারব। সম্প্রতি একটি টেলিভিশন টক শোতে মিনু (বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনু) তো তাঁকে একটা কথা বলেছেন। বলেছেন, “তুমি বসে বসে গাঁজা খেতে। যুবসমাজকে নষ্ট করেছিলে।” তিনি কিন্তু তাঁর এ কথার উত্তর দিতে পারেননি। মিনু তাঁকে বলেছে “উচ্ছষ্ট রাজনীতিবিদ”। তারও উত্তর দিতে পারেনি। মিনুর উত্তর দিতে পারে না, আমরা বললে তো…।’

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘পার্টির পদ-পদবী ব্যবহার করে এন্তাজুল হক বাবু দলীয় কর্মীদের উষ্কানি ও বিভ্রান্ত করেছেন যা দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার সামিল।’ আর জেলার নেতা আকবর আলী সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘দলীয় পদ ব্যবহার করে তিনি ব্যক্তিগত সুবিধা নিয়েছেন।’

এ প্রসঙ্গে এন্তাজুল হক বাবু বলেন, ‘পার্টি করে যদি কেউ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে থাকে, সেটা মহানগর সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু। ওএমএসের চাল থেকে শুরু করে তিন মাস পর পর এমপির যে অনুদান আসে, ওইগুলো সে ফলস কাগজপত্র জমা দিয়ে প্রতিবার তিনটা-চারটা করে বরাদ্দ নেয়। সেটা সে হাতখরচ করে, সংসার চালায়। হয়তো ১০ পার্সেন্ট সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু পেয়েছে। ৯০ পার্সেন্টই দেবু। আমরা কোন সুবিধা নিইনি। আমার কথাবার্তার সঙ্গে একমত পোষণ করার কারণে আকবরকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।’

পুরোনো সংখ্যা

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
%d bloggers like this: