গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সাত মেয়র প্রার্থী এক মঞ্চে আধুনিক ও পরিকল্পিত নগর গড়ার অঙ্গীকার করেছেন। সোমবার গাজীপুর জেলা শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে সু-শাসনের জন্য নাগরিক- সুজন আয়োজিত মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠানে প্রার্থীরা এ অঙ্গীকার করেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী সাত মেয়র প্রার্থী এক মঞ্চে বসে তারা এলাকার উন্নয়নে নিজেদের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন এবং উপস্থিত ভোটারদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুজনের গাজীপুর মহানগর শাখার সভাপতি মোঃ মনিরুল ইসলাম রাজিব। সুজনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় এতে অংশ নেন সাত মেয়র প্রার্থী যথাক্রমে আওয়ামী লীগের মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা), বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকার (ধানের শীষ), বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির কাজী মোঃ রুহুল আমীন (কাস্তে), ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা ফজলুর রহমান (মিনার), ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন (মোমবাতি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর মোঃ নাসির উদ্দিন (হাত পাখা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমেদ টেবিল ঘড়ি)।
অনুষ্ঠানে আয়োজকদের পক্ষ থেকে দেয়া ১৩দফা অঙ্গীকার নামা দর্শকদের সামনে পড়ে শোনান সুজনের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মুর্শিকুলী আহমদ শিমুল। পরে প্রার্থীগণ অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করেন। এর পর প্রার্থীগণ দর্শকদের সরাসরি প্রশ্নের জাবাব দেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সুজনের জেলা সম্পাদক মোঃ রুহুল আমিন সজিব। সুজনের কেন্দ্রীয় প্রধান সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার অনুষ্ঠানে সহসঞ্চালক ছিলেন। মূলত: পুরো অনুষ্ঠানে প্রধান দুই দলের প্রার্থীর প্রশ্নোত্তর পর্ব দেখতে অনুষ্ঠানেস্থলে প্রচুর জন সমাগম হয়। উপস্থিত মেয়র প্রার্থী প্রতিজনকে তিনটি করে প্রশ্ন করা হয় দর্শকসারি থেকে। তারা সে সব প্রশ্নের জবাব দেন।
দর্শকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জাপান ও চীনের সহায়তায় গাজীপুর সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ৫৭টি মাস্টারপ্ল্যান তৈরী করেছি। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সরকারের সমন্বয়ে জনগণের সহায়তায় আমি নির্বাচিত হলে এসব মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করবো। আমি সিটির অভ্যন্তরে ৫টি অর্থনৈতিক জোন ও শ্রমিকদের বাসস্থানের জন্য ৮টি বসবাসের জোন তৈরী করবো।
তিনি বলেন, আমি রাজনীতি করি মানুষের জন্য। আমি সবার জন্য গাজীপুর সিটিকে একটি পরিকল্পিত আধুনিক নগর হিসেবে গড়তে চাই। শিক্ষা ফাউন্ডেশন গঠন করে বাংলা, ইংরেজী, আরবী ও কওমী শিক্ষাকে প্রধান্য দিয়ে সবার জন্য শিক্ষা বিস্তারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছি। ২২’শ কোটি টাকা ব্যয়ে বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। আমি ফুটপাতসহ সুষ্ঠু ড্রেনেজ নির্মাণ করে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন করবো। গাজীপুর সিটিকে একটি ডাইনামিক মডেল শহর গড়তে সবার সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। আমি এ জন্য অপজিট পার্টির সহযোগিতা কামনা করি।
হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, স্থানীয় সরকারের উপর কেন্দ্রীয় সরকার হস্তক্ষেপ করলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হয়। বর্তমান মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানকে বিভিন্ন সময়ে কারাগারে রাখা হয়েছে। তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তিনি আশানুযায়ি উন্নয়ন করতে পারেন নি। গাজীপুর একটি শিল্প সমৃদ্ধ শ্রমিক এলাকা। গাজীপুর সিটিকে উন্নয়ন করতে হলে পরিকল্পিত ভাবে প্ল্যান মাফিক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাউন্সিলরদের সহযোগিতা নিয়ে আমি উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করবো। তিনি বলেন ১৯৭৪ সনে টঙ্গী পৌর সভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলাম। সে সময়ে আমি আন্তরিকভাবে পৌরসভার উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করেছি।
ইসলামী ঐক্য জোটের প্রার্থী ফজলুর রহমান বলেন, ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়া ও তাদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব সরকার ও প্রশাসনের। তিনি শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে বলেন বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়া সম্ভব নয়। তাই তিনি নির্বাচিত হলে বর্তমান শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষা সংযোজন করবেন।
ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মোঃ জালাল উদ্দিন, এক প্রশ্নের জবাবে বলেন আধুনিক ও কর্মসংস্থানমুখি শিক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ ও তথ্য প্রযুক্তির নগরী গড়তে আইটি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিবেন এবং যুব সমাজকে মাদকের কবল থেকে রক্ষা করতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পুলিশ, প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একত্রে বসে কাজ করবেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী নাসির উদ্দিন বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে নগরীর গ্যাস সমস্যা সমাধানের উদ্যোগে নেবেন। মাদক উদ্ধারের নামে সাধারণ মানুষকে হয়রাণী বন্ধের পদক্ষেপ নিবেন। জঙ্গিবাদ রুখবেন।
বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির মেয়র প্রার্থী কাজী মোঃ রুহুর আমীন বলেন, তিনি যানজটমুক্ত, পরিচ্ছন্ন আধুনিক শহর গড়ে তুলবেন। শ্রমিকদের কর্মসংস্থান ও তাদের সুযোগ সুবিধাবৃদ্ধিসহ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদ বলেন, যানজট নিরসন ও নগরবাসীর দূর্ভোগ লাঘবে সিটি কর্পোরেশনের সকল রাস্তা দ্বিগুন প্রশস্ত ও পর্যাপ্ত নতুন রাস্তা তৈরী করবেন। তিনি দুনৃীতি করবেন না। নির্বাচনের আগে হলফনামায় যে সম্পদ ঘোষণা করেছেন নির্বাচিত হলে দায়িত্বগ্রহণ শেষেও হলফনামার মাধ্যমে সম্পদের হিসাব নগরবাসীকে পেশ করে যাবেন। তিনি ২-৩ কাঠার ছোট ছোট বাড়ি মালিকদের ট্যাক্স মওকুফ করবে।
আপনার মতামত লিখুন :